
ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছরের হজ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব পাড়ি জমিয়েছেন মোট ২২ হাজার ২০৩ জন হজযাত্রী। হজ কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ৫৪টি ফ্লাইটে এসব যাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন। তবে হজযাত্রীদের যাত্রার এই পর্বে কিছু দুঃসংবাদও রয়েছে—সৌদি আরবে আরও একজন বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে, যা নিয়ে চলতি মৌসুমে মৃত হজযাত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ জনে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ সম্পর্কিত হেল্প ডেস্ক এবং পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২২ হাজার ২০৩ জন হজযাত্রীর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাত্রা করেছেন ৪ হাজার ৫৬৪ জন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গেছেন ১৭ হাজার ৫৩৯ জন হজযাত্রী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছরের হজে সরকারি ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও, সার্বিক ব্যবস্থাপনা এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক গতিতেই চলছে। হজ মিশনের পর্যবেক্ষণে যাত্রী পরিবহন, সৌদি আরবে অবতরণ ও মদিনা-মক্কা পরিবহন পর্যায়ে কোনও বড় ধরনের গড়বড় হয়নি।
৫৪টি ফ্লাইট পরিচালনার মধ্যে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ২২টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। সৌদি এয়ারলাইনস পরিচালনা করেছে ১৭টি এবং বেসরকারি সৌদি উড়োজাহাজ সংস্থা ফ্লাইনাস পরিচালনা করেছে ১৫টি ফ্লাইট।
বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর সমন্বয়কারী সংগঠন হাব (হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) বলছে, এবার তারা অনেক আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল, যার কারণে এবার সময়মতো ও স্বাচ্ছন্দ্যে হজযাত্রীদের পাঠানো সম্ভব হচ্ছে।
হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেন, “বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাত্রী পাঠানো আগের তুলনায় এবার বেশি পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে। প্রথম সপ্তাহেই লক্ষণীয় সংখ্যক হজযাত্রী পাঠানো হয়েছে। আশা করি পরবর্তী ধাপগুলোও এভাবেই সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হবে।”
হজ হেল্প ডেস্কের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, সৌদি আরবে আরও একজন বাংলাদেশি হজযাত্রী মারা গেছেন। কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুরের বাসিন্দা ফরিদুজ্জামান (৫৭) গত ২ মে দিবাগত রাতে মারা যান। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘স্বাভাবিক’ উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে, মদিনার স্থানীয় সময় ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন আরেক হজযাত্রী খলিলুর রহমান (৭০)।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মৃত্যুবরণকারীদের দাফন ইতোমধ্যেই সৌদি আরবে ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী সম্পন্ন হয়েছে।
এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) জি এম সরকার বলেন, “প্রতি বছরই আমরা কিছু হজযাত্রীকে বার্ধক্যজনিত কারণে হারাই। এবারের হজেও আমরা দু’জন সম্মানিত হজযাত্রীকে হারালাম। তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং সংশ্লিষ্ট পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।”
চলতি বছরের হজ ফ্লাইট কার্যক্রম শুরু হয় ২৯ এপ্রিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটের মাধ্যমে। ওই ফ্লাইটে ৩৯৮ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে রওনা হন।
চলমান কার্যক্রম অনুযায়ী, হজ ফ্লাইট চলবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত। তার আগে প্রত্যাশিত ৮৭ হাজার ১০০ হজযাত্রীর সবাইকে সৌদি আরবে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই সরকার ও এজেন্সিগুলো কাজ করে যাচ্ছে।
এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন মোট ৫ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৮১ হাজার ৯০০ জন হজযাত্রী।
হিজরি ১৪৪৫ সনের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ জুন (৯ জিলহজ) অথবা একদিন আগে-পরে। হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ১০ জুন এবং শেষ ফিরতি ফ্লাইট নির্ধারিত রয়েছে ১০ জুলাই।
এ বিষয়ে হজ মিশনের প্রতিনিধি মাওলানা শরীফুল ইসলাম বলেন, “ফিরতি ফ্লাইট নির্বিঘ্ন করার জন্য সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ মিশনের প্রতিনিধি দল মক্কা ও মদিনায় প্রতিদিনই যাত্রীদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।”
এত বিপুলসংখ্যক যাত্রীর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা ও ওষুধ সরবরাহের বিষয়টি সামনে এসেছে।
মক্কায় দায়িত্বরত স্বাস্থ্য মিশনের কর্মকর্তা ডা. মনোয়ারা পারভীন বলেন, “প্রবীণ যাত্রীদের আমরা বারবার সতর্ক করছি যেন তারা বেশি রোদে না বের হন। ওষুধ সরবরাহ ও মেডিকেল টিম স্ট্যান্ডবাই রয়েছে প্রতিটি সেক্টরে।”
সমাপনী মন্তব্য
হজ যাত্রা সবসময়ই একটি ধর্মীয়, মানসিক ও শারীরিকভাবে কঠিন সফর। বাংলাদেশি হজযাত্রীরা যেন নিরাপদে, সুস্থভাবে এবং সুশৃঙ্খল পরিবেশে হজ পালন করতে পারেন, সে লক্ষ্যে প্রতিটি সংস্থা তৎপর।
সামনে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা যত ঘনিয়ে আসবে, ততই বাড়বে প্রশাসনিক চাপ ও তদারকি। তাই সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে আরও সমন্বিত এবং দ্রুত সাড়া দেওয়া কাঠামোতে কাজ করতে হবে—এই প্রত্যাশা এখন দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের।
বাংলাবার্তা/এমএইচ