
ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগকে ‘গণহত্যাকারী’ আখ্যায়িত করে দলটি নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক ও রাজনৈতিক কর্মী হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, “যদি, কিন্তু কিংবা অথবা ছাড়া—সরাসরি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।” এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আজ বিকেলে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে একটি বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন এবং সাধারণ নাগরিকদের এতে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন।
হাসনাত তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শুক্রবার (২ মে) সকালে এক সরব পোস্টে লেখেন,
“যদি, কিন্তু, অথবা ছাড়া গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আজ বিকাল ৩টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে অনুষ্ঠিতব্য বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিন।”
তিনি তার এই ঘোষণার মাধ্যমে সরাসরি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছেন এবং দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জোরালোভাবে সামনে এনেছেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি কোনো রাজনৈতিক কৌশলের ভাষা ব্যবহার না করে সরাসরি এককথায় বলছেন, 'নিষিদ্ধ করতেই হবে'—এই ভাষা তার বক্তব্যকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ এবং বিতর্কিত করে তুলেছে।
আজকের বিকেলের বিক্ষোভ সমাবেশে সাধারণ নাগরিকদের উপস্থিত হয়ে আওয়ামী লীগের ‘অগণতান্ত্রিক ও দমনমূলক কর্মকাণ্ডের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান হাসনাত আবদুল্লাহ।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১ মে) নিজের আরেকটি ফেসবুক পোস্টে হাসনাত এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হিসেবে ভারতের ভূমিকা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “চিন্ময়ের জামিনকে আমি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করি না। চিন্ময়ের ঘটনার শুরু থেকেই ভারতীয় আধিপত্যবাদ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিচারিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অন্যায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে।”
চিন্ময়ের জামিন প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “এই জামিন কি ভারতের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে দেওয়া হয়েছে? প্রশ্ন উঠবেই। কেননা, সাম্প্রতিককালে দেশের ভেতরে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে।”
হাসনাত আবদুল্লাহ তার পোস্টে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেও কড়া বার্তা দেন। তিনি লেখেন,
“ইন্টেরিম সাবধান! আলিফের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ভারতীয় আগ্রাসনের রাস্তা উন্মুক্ত করলে পরিণতি ভালো হবে না।”
তিনি এই বক্তব্যে সম্ভবত আলিফ নামের কোনো যুবকের রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় নিপীড়নে নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সংকটপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরেছেন। তার মতে, ভারত বাংলাদেশে ‘আধিপত্য বিস্তার’ করছে এবং সেটি রক্তের বিনিময়ে হলেও প্রতিহত করতে হবে।
হাসনাতের বক্তব্যের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়েছে। অনেকেই তার বক্তব্যকে উসকানিমূলক ও স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে সাহসী ও সময়োপযোগী প্রতিবাদ হিসেবে দেখছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে চিন্ময় গুহ এবং আলিফ ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা, ভারতীয় প্রভাব নিয়ে সন্দেহ, ও সরকারের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব ঘটনার পটভূমিতে হাসনাতের বক্তব্যকে অনেকেই স্বতন্ত্র রাজনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন, যা একটি বিরোধী জনমত গঠনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
হাসনাত আবদুল্লাহর আজকের ঘোষণাপত্র ও বিক্ষোভ ডাক একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, দেশের একটি শ্রেণি আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘অগণতান্ত্রিক ও দমনমূলক’ মনে করছে এবং ভারতীয় প্রভাবকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে চিহ্নিত করছে। বিকেল ৩টায় বায়তুল মোকাররমে কী পরিমাণ জনসমাগম হয় এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসন কীভাবে এ সমাবেশকে গ্রহণ করে, তার ওপর আগামী দিনের রাজনৈতিক গতিপথ নির্ভর করতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ