
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রবণতা বাড়ছে। দেশের সেনাবাহিনী এবং পুলিশের মতো রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও এ ধরণের ভুল তথ্যের শিকার হচ্ছে। এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে নিয়ে ৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেনাপ্রধান এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে জড়িয়ে গত এপ্রিল মাসে মোট ১৬টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে সেনাপ্রধানের নাম উল্লেখ করে ৬টি, বাংলাদেশ পুলিশের বিষয়ে ৯টি ভুল তথ্য এবং অন্য কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ের বিষয়ে বেশ কিছু বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। রিউমর স্ক্যানার এই ধরনের ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে নিয়মিতভাবে কাজ করে চলেছে।
এপ্রিল মাসে রিউমর স্ক্যানার আরও জানায় যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়েও ২৯টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এ তথ্যগুলোর মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশ নেতিবাচকভাবে তাকে উপস্থাপন করেছে। এছাড়া, চলতি বছরের এপ্রিলে অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়েও ১২টি ভুল তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এই ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশই সরকারকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছে।
এপ্রিলে অন্যান্য কিছু ভুল তথ্যের মধ্যে সরকারী উপদেষ্টাদের বিষয়েও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারিত হয়েছে। রিউমর স্ক্যানার জানায়, সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে ড. আসিফ নজরুল, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আ ফ ম খালিদ হোসেন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিষয়েও একাধিক ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে।
ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায় যে, এপ্রিল মাসে ২৯৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ফেসবুক পেইজে পাওয়া গেছে, যা ছিল ২৭৬টি। এছাড়া, ইউটিউবে ৫৪টি, ইনস্টাগ্রামে ৪৮টি, এক্সে ৪৪টি, টিকটকে ২৪টি এবং থ্রেডসে ১৩টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমেও ১৪টি ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন অনুসারে, ভুল তথ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল জাতীয় বিষয়ক ভুল, যা ছিল ১০১টি, অর্থাৎ মোট ভুল তথ্যের ৩৪ শতাংশ। এর পরবর্তী ছিল রাজনৈতিক বিষয়ে ৯৫টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ৩৮টি, ধর্মীয় বিষয়ে ২৭টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে ৮টি এবং অন্যান্য বিষয়ে বিভিন্ন ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেকিং দলের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, ভিডিও, ছবি এবং তথ্যের ভিত্তিতে ভুল তথ্য প্রচারের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ছিল। ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল তথ্য ছিল ১০৫টি, ছবি কেন্দ্রিক ভুল তথ্য ৫৩টি এবং তথ্য ভিত্তিক ভুল ছিল ১৩৮টি। শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলির মধ্যে ১৮০টি মিথ্যা, ৬৬টি বিভ্রান্তিকর এবং ৪৮টি বিকৃত তথ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এপ্রিলে ইন্টারনেটে ভুল তথ্য ছড়ানোর ঘটনাগুলি দেশের জনগণের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুল তথ্যের প্রচার শুধু সাধারণ মানুষের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে না, বরং এটি সমাজে অস্থিতিশীলতা এবং বিভাজনও তৈরি করতে পারে। তাই রিউমর স্ক্যানার এই ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে এবং সঠিক তথ্য ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছে।
এ ধরনের গুজব এবং অপতথ্যের বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও সচেতন হওয়া জরুরি। শুধুমাত্র সঠিক এবং যাচাই করা তথ্যের মাধ্যমে একটি সুস্থ এবং সঠিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।
বাংলাবার্তা/এমএইচ