
ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছর পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব গমন করা হজযাত্রীদের মধ্যে প্রথম বাংলাদেশির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার রামকল বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. খলিলুর রহমান (৭০) মদিনায় ইন্তেকাল করেন। বিষয়টি মদিনা হজ অফিস থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৯ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তিনি মদিনায় অবস্থান করছিলেন। খলিলুর রহমান গত মঙ্গলবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৩৪০১ নম্বর ফ্লাইটে সৌদি আরব পৌঁছান। তার মৃত্যুর কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও, বয়সজনিত শারীরিক জটিলতাই এর পেছনে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হজে এসে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তির জন্য মদিনায় স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় দাফনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। হজ কর্তৃপক্ষ তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
এদিকে, হজযাত্রী পরিবহন কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ বিষয়ক পোর্টালের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৩২টি হজ ফ্লাইটে সৌদি আরব পৌঁছেছেন মোট ১৩ হাজার ১৯১ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী।
এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় গেছেন ৩ হাজার ৭৩৮ জন হজযাত্রী এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গেছেন ৯ হাজার ৪৫৩ জন।
এ পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিচালনা করেছে ১৪টি ফ্লাইট, সৌদি রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স সৌদিয়া পরিচালনা করেছে ৯টি ফ্লাইট এবং সৌদি বাজেট ক্যারিয়ার ফ্লাইনাস পরিচালনা করেছে আরও ৯টি ফ্লাইট।
চলতি বছরের হজ ফ্লাইট কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২১ এপ্রিল, যা চলবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে সর্বমোট ৮৭ হাজার ১০০ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী সৌদি আরব যাবেন বলে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন ৫ হাজার ২০০ জন এবং বাকি ৮১ হাজার ৯০০ জন যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।
ফ্লাইটের প্রাক-পর্ব শেষ হওয়ার পর, হজ পালনের নির্ধারিত দিন শেষে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে আগামী ১০ জুন, যা শেষ হবে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত মোট ৭০ হাজার ৮১৪ জন হজযাত্রী ইতোমধ্যে ভিসা পেয়েছেন। অবশিষ্টদের ভিসার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
চলতি বছরে বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট ৭০টি হজ এজেন্সি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছে। এসব এজেন্সির মাধ্যমে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাত্রীরা মক্কা-মদিনায় পৌঁছাচ্ছেন এবং তাদের থাকা-খাওয়াসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছর হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে আগামী ৫ জুন। সে অনুযায়ী, হজ পালনকারীদের মধ্যে অধিকাংশ ইতোমধ্যেই সৌদি আরবে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হজের আগের সময়টুকু তাঁরা মদিনা শরিফে অবস্থান করে নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করবেন এবং পরে মক্কায় গিয়ে হজের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন।
প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশ হজ মিশন সৌদি আরবে একটি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্র, হেল্প ডেস্ক এবং মোবাইল টিম গঠন করেছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও অসুস্থ হজযাত্রীদের জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা, ওষুধ বিতরণ এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পরিবহন ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম মোটামুটি সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে চললেও, প্রথম মৃত্যুর খবরটি গোটা হজ মিশনে কিছুটা শোকাবহ পরিবেশ তৈরি করেছে। হজ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়াত হজযাত্রীর জানাজা ও দাফন যথাযথ ধর্মীয় নিয়মে সম্পন্ন করার পাশাপাশি তার পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।
আল্লাহতায়ালা তাঁর আত্মাকে জান্নাত দান করুন এবং অবশিষ্ট হজযাত্রীদের জন্য হজের সম্পূর্ণ সফর নিরাপদ ও কল্যাণকর হোক—এমনটাই কামনা সকলের।
বাংলাবার্তা/এমএইচ