
ছবি: সংগৃহীত
কাশ্মীর উপত্যকায় সম্প্রতি সংঘটিত এক সহিংস হামলার পেছনে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা 'র' (Research and Analysis Wing) জড়িত – এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তানের একাধিক গণমাধ্যম। তারা দাবি করছে, টেলিগ্রামে ‘ফাঁস হওয়া’ একটি গোপন নথির ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে এই অভিযানের নেপথ্য পরিকল্পনা, উদ্দেশ্য এবং কৌশল নিয়ে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। যদিও এই তথাকথিত নথির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি, তবু তা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে আগুনে ঘি ঢালার মতোই কাজ করেছে।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো যেটিকে “গোপন অভ্যন্তরীণ নির্দেশনা” বলে দাবি করছে, সেই নথিতে লেখা আছে যে কাশ্মীরের পহেলগাম এলাকায় সংঘটিত সাম্প্রতিক হামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অমুসলিম জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়। একইসঙ্গে সেখানে এও উল্লেখ রয়েছে যে, ঘটনাটিকে পাকিস্তান-সমর্থিত ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপ’ হিসেবে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে ভুয়া আইডি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়। এতে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-কে ইচ্ছাকৃতভাবে জড়িয়ে আন্তর্জাতিক মহলে একটি নেতিবাচক বার্তা পাঠানোর পরিকল্পনার কথাও উঠে আসে।
এই নথির একটি অংশের স্ক্রিনশটও অনেকে টেলিগ্রামে ছড়িয়ে দিয়েছে, যেখানে কিছু নির্দেশনা ও অপারেশন কোড দেখা যায়। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এখনও এই তথাকথিত নথির উৎস, প্রামাণিকতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান। অনেকের মতে, এটি হতে পারে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তথ্যযুদ্ধের (information warfare) অংশ, আবার কেউ কেউ এটিকে ভারতেরই ভেতরকার ফাঁস বলে সন্দেহ করছেন।
এই অভিযোগ সামনে আসার পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) বরাবর একটি পূর্ণমাত্রার সামরিক মহড়া চালিয়েছে। ১ মে অনুষ্ঠিত এই মহড়ায় অংশ নেয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান, কামান, রকেট লঞ্চারসহ আধুনিক রণসরঞ্জাম। যুদ্ধের পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই মহড়া মূল্যায়ন করছেন কৌশলবিদরা।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সরাসরি ভারতকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “ভারতের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সামরিক আগ্রাসন বা উসকানি এলে তার জবাব দেওয়া হবে দ্বিগুণ শক্তিতে। পাকিস্তান তার ভূখণ্ড রক্ষায় কখনও পিছু হটবে না।”
ভারতের পাল্টা হুঁশিয়ারি: কাউকে ছাড়া হবে না
অন্যদিকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “কাশ্মীরে হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা কেউ পার পাবে না। প্রত্যেককে খুঁজে বের করা হবে এবং কড়া শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, “যারা ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে, তাদের জন্য কোনো সহানুভূতি নেই।”
এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হোয়াইট হাউসে একটি অনুরোধ পেশ করে বলেন, “দু'দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা এড়াতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হস্তক্ষেপ করতে হবে।” এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সরাসরি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে ফোন করে উত্তেজনা প্রশমন এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার আহ্বান জানান।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীর অঞ্চলে নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কায় আগামী ১০ দিনের জন্য সব ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারতের সম্ভাব্য বিমান হামলার শঙ্কা থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে এবং বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
যদিও দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করে যাচ্ছে এবং সামরিকভাবে প্রস্তুত থাকছে, তবে আন্তর্জাতিক মহল থেকে ক্রমশই শান্তিপূর্ণ আলোচনার দাবি জোরদার হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে অল্প উত্তেজনাও পুরো উপমহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে, যখন এর সঙ্গে তথ্যযুদ্ধ, সামাজিক মাধ্যমে গুজব এবং গোপন নথির মতো বিতর্কিত বিষয় যুক্ত হয়, তখন বাস্তবতা ও মিথ্যাকে আলাদা করা হয়ে পড়ে আরও কঠিন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ