
ছবি: সংগৃহীত
কাশ্মীর উপত্যকায় ভারতের নিয়ন্ত্রিত এলাকা পাহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষাপটে উপমহাদেশে যখন নতুন করে উত্তেজনার আবহ তৈরি হয়েছে, তখন এর মধ্যেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেশজুড়ে বড় পরিসরে এক সামরিক মহড়া শুরু করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত রেডিও পাকিস্তান এবং একাধিক নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ৩০ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই মহড়া মূলত সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চলমান রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এ মহড়াকে শুধু একটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ নয় বরং একটি কৌশলগত শক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। বিশেষত, যেকোনো সম্ভাব্য আগ্রাসনের জবাবে সামরিক প্রস্তুতির এক বাস্তব নমুনা হিসেবেই বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সীমান্তঘেঁষা সিয়ালকোট, নারোওয়াল, জাফরওয়াল এবং শাকরগড় এলাকায় এই মহড়া সবচেয়ে বেশি সক্রিয়ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এই এলাকাগুলো ঐতিহাসিকভাবেই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় সামরিক দৃষ্টিকোণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। তাই এই অঞ্চলগুলোতে মহড়া চালানো পাকিস্তানের কৌশলগত বার্তা বহন করে বলেই মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।
মহড়ায় অংশগ্রহণ করছে হালকা থেকে শুরু করে ভারী যুদ্ধাস্ত্র। এতে আধুনিক ট্যাংক, কামান এবং পদাতিক বাহিনীর ইউনিট সরাসরি মাঠে অংশ নিয়েছে। যুদ্ধ কৌশলের আলোকে হালনাগাদ যুদ্ধাস্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যবহারিক প্রদর্শনীও চালানো হচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়া তদারকি করছেন উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তারা।
রেডিও পাকিস্তানের খবরে বলা হয়েছে, এই মহড়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শত্রুপক্ষ, বিশেষ করে ভারতের কাছে একটি ‘সুনির্দিষ্ট, কঠোর ও বাস্তবভিত্তিক বার্তা’ পৌঁছে দেওয়া। বার্তাটি হলো—পাকিস্তান তার সীমান্ত এবং মাতৃভূমির প্রতিরক্ষায় সর্বদা সর্বোচ্চ প্রস্তুত এবং আক্রমণের জবাবে শক্তিশালী প্রতিরোধ দিতে সক্ষম।
নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলছে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এই মহড়ার মাধ্যমে এমন একটি বার্তা দিচ্ছে যে, যদি কোনোভাবে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, তবে তারা যে কোনো মূল্যে তার প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করবে। এর জন্য সেনাবাহিনীর প্রতিটি ইউনিট, অফিসার ও সৈনিক সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছে।
মহড়ায় অংশগ্রহণকারী একাধিক ইউনিটের ফিল্ড রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, সৈনিকদের ভেতর যুদ্ধপ্রস্তুতির মানসিকতা এবং কৌশলগত সচেতনতা অভাবনীয়ভাবে বাড়ানো হয়েছে। এমনকি বেসামরিক প্রশাসনের কিছু ইউনিটকেও সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে জাতীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনে সামগ্রিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা যায়।
এদিকে, মহড়ার আগের দিন অর্থাৎ ২৯ ও ৩০ এপ্রিল রাতের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতের রাফায়েল যুদ্ধবিমানগুলো কাশ্মীর সীমান্তে ভারতের নিয়ন্ত্রিত আকাশসীমায় টহল দেয়। পাকিস্তান বিমানবাহিনী (পিএএফ) দাবি করেছে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলোর গতিবিধি শনাক্ত করে এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়। পাকিস্তানের এই প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় বিমানগুলো ‘হতচকিত হয়ে’ পিছু হটে যায় বলেও তারা জানিয়েছে।
পাকিস্তানি নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলছে, এই ঘটনাটি কেবল একটি আকাশসীমার টহলের বিষয় নয়, বরং ভারতের কৌশলগত উপস্থিতি এবং চাপে রাখার প্রচেষ্টারই একটি অংশ। তবে পাকিস্তানের তাৎক্ষণিক ও কার্যকর প্রতিক্রিয়ায় ভারত স্পষ্ট বার্তা পেয়েছে বলেই মনে করছেন সামরিক পর্যবেক্ষকরা।
শেষ পর্যন্ত গোটা মহড়ার মূল প্রতিপাদ্য—পাকিস্তান তার জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়ে কোনোরূপ আপস করবে না এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও আক্রমণের উপযুক্ত জবাব দেবে।
এই প্রেক্ষাপটে উপমহাদেশের দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের সাম্প্রতিক তৎপরতা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহলেও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। কূটনৈতিকভাবে এখনও উত্তেজনা প্রশমনের কোনো স্পষ্ট উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বরং সেনা তৎপরতা ও সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধির মাধ্যমে দুই দেশই নিজেদের কৌশলগত অবস্থান মজবুত করার চেষ্টা করছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ