
ছবি: সংগৃহীত
গত কিছু বছর ধরে যেখানে ঢালিউড সিনেমা ছিল একরকম স্থবির, সেখানে এবারের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া বাংলা সিনেমাগুলো একেবারে চমক সৃষ্টি করেছে। আশা, উদ্যোগ এবং পরিশ্রমের এক অপূর্ব মেলবন্ধনে বাংলা সিনেমার টিকিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৭৫ কোটি টাকার আশেপাশে! এই অঙ্কটি সত্যিই অবিশ্বাস্য, এমনকি সিনেমা শিল্পের অনেক পেশাদারও বিশ্বাস করতে পারছেন না।
গত কয়েক বছরের রেকর্ডে ঈদুল ফিতরের মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ছবির ব্যবসা অনেকটাই আশানুরূপ ছিল না, কিন্তু এবারের ঈদে ৭৫ কোটি টাকার ব্যবসা নিঃসন্দেহে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করল। বিশেষ করে শাকিব খানের 'বরবাদ', সিয়াম আহমেদ অভিনীত 'জংলি', আফরান নিশো’র 'দাগি' এবং মোশাররফ করিমের 'চক্কর ৩০২'— এই ছবিগুলোর প্রতি দর্শকদের যে আগ্রহ দেখানো হয়েছে, তাতে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে সিনেমা শিল্পে।
সিনেমাগুলোর প্রদর্শনীর পরিমাণ এবং সাফল্য দেখে একে একে অবাক হচ্ছেন প্রযোজক, পরিচালক, কলাকুশলী, এবং দর্শকরা। শাকিব খানের 'বরবাদ' সিনেমাটি সবার কাছে অন্যতম আকর্ষণ ছিল। বিশেষ করে শাকিব খান, তার অসংখ্য ভক্তদের কাছে একটি উল্লেখযোগ্য নাম। সিয়াম আহমেদ এবং আফরান নিশো—ও তাদের অভিনয়ের মাধ্যমে মুগ্ধ করেছেন বহু দর্শককে। ‘দাগি’ এবং ‘চক্কর ৩০২’ তো শুধু ঢাকার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকেনি, দেশের নানা প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং দর্শকরা তাদের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
সিনেমাগুলোর টিকিট বিক্রির মোট হিসাব বলছে, শাকিব খানের 'বরবাদ' ছবির বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬২ কোটি ৫৮ লাখ টাকার, 'দাগি' ৭ কোটি ৬০ লাখ, 'জংলি' ৪ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং 'চক্কর ৩০২' ১ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি বিক্রি হয়েছে। অবশ্য, এই পরিসংখ্যানের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে কারণ দেশের বক্স অফিস সিস্টেম এখনো পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অঙ্কটি আরও বাড়বে কারণ সিনেমাগুলোর প্রদর্শন এখনও চলছে।
যদিও ছবির ব্যবসায় সাফল্য অর্জন করলেও প্রযোজকরা মনে করছেন, তাদের প্রত্যাশা আরো বেশি ছিল। উদাহরণস্বরূপ, 'বরবাদ' ছবির প্রযোজক খোলাখুলি বলেছেন যে অনেক জায়গা থেকে এখনও টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি এবং কিছু হলের কালেকশন নিয়ে সন্দিহান। তবে, ছবির নির্মাতারা আশা করছেন যে ভবিষ্যতে আরও ভালো সময় আসবে।
ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর মধ্যে এখনও ৭২টি প্রেক্ষাগৃহে 'বরবাদ' দেখানো হচ্ছে, ২৭টি প্রেক্ষাগৃহে 'জংলি' এবং ১২টি প্রেক্ষাগৃহে 'দাগি' এখনও চলমান রয়েছে। এর পাশাপাশি, সিনেমাগুলোর মুক্তি দেশের বাইরের বাজারেও হয়েছে, যা সিনেমার একক সফলতার সিঁড়ি হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।
এই বছর ঈদুল ফিতরে বাংলা সিনেমার ব্যবসায় যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে, তা থেকে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় যে ঢালিউড আবারো জেগে উঠতে যাচ্ছে। প্রযোজক, পরিচালক এবং শিল্পীদের জন্য এটি একটি বড় সাফল্য এবং ভবিষ্যতে তারা আরো চমকপ্রদ কাজ উপহার দিতে পারবেন, এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ