
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকাই অভিনয় জগতের পরিচিত মুখ ও প্রযোজক সিদ্দিকুর রহমানকে ঘিরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। রাজধানীর গুলশান থানায় এই অভিনেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে দুটি মামলার—একটি হত্যা, অন্যটি হত্যাচেষ্টার অভিযোগে। এই মামলাগুলোর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে সিদ্দিককে গুলশান থানায় সোপর্দ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম।
তিনি বলেন, “অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি হত্যা ও অন্যটি হত্যাচেষ্টা সংক্রান্ত। সেগুলোর আলোকে তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হবে। ইতোমধ্যে রমনা থানায় গুলশান থানার একটি টিম এসে পৌঁছেছে।”
এই তথ্যের পরপরই গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ব্যাপক জনমত তৈরি করেছে।
ভিডিও ঘিরে জনসচেতনতা ও ক্ষোভ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একদল ব্যক্তি সিদ্দিকুর রহমানকে প্রকাশ্যে মারধর করছে। ভিডিওটিতে সিদ্দিকের জামা ছেঁড়া অবস্থায় অসহায়ভাবে চিৎকার করতে দেখা গেছে। এক পর্যায়ে ভিডিওতে থাকা এক যুবক বলেন, “থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সিদ্দিককে।” ভিডিওটি এতটাই সংবেদনশীল যে অনেকেই বিষয়টিকে ‘মানবাধিকারের লঙ্ঘন’ এবং ‘পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন।
ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর কাকরাইল এলাকায়, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে। এই ভিডিও সামনে আসার পর অভিনেতার ঘনিষ্ঠজন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন—একজন সাংস্কৃতিক কর্মী বা মিডিয়ার পরিচিত মুখকে এমন আচরণ করার যৌক্তিকতা কোথায়?
বিচার চেয়ে মুখ খুলেছেন অনেকেই
এই ঘটনার পর সিদ্দিকের সহকর্মী, বন্ধু ও মিডিয়াকর্মীরা সামাজিক মাধ্যমে একের পর এক পোস্ট দিয়ে বিচার দাবি করছেন। কেউ বলছেন, “বিচার চাই—কারণ সিদ্দিক যাই করুক, আইন নিজের হাতে তোলা যাবে না।” আবার অনেকে বলছেন, “সিদ্দিক রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমত পোষণ করতেন বলেই তাকে টার্গেট করা হয়েছে।”
অন্যদিকে, গুলশান থানার একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই রাজধানীতে “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন” চলছিল, যা কেন্দ্র করে বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এই আন্দোলনের সময় একাধিক জায়গায় সংঘর্ষ, হামলা ও ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ দাবি করছে, সিদ্দিক সরাসরি বা পরোক্ষভাবে এই সহিংসতায় সম্পৃক্ত ছিলেন।
আইনি প্রক্রিয়ার অগ্রগতি ও পরবর্তী করণীয়
রমনা থানায় গ্রেফতারের পর প্রাথমিকভাবে তাকে সেখানেই রাখা হয়। পরে গুলশান থানায় মামলা থাকায় তাকে সেখানে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পুলিশের মতে, তদন্তের স্বার্থে তাকে রিমান্ডে নেয়া হতে পারে।
তবে সিদ্দিকের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার আইনজীবী বা পরিবারের সদস্যদের মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
সংস্কৃতিক অঙ্গনে আলোড়ন
বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের একসময়ের জনপ্রিয় মুখ সিদ্দিক শুধু অভিনয় নয়, নাটক প্রযোজনায়ও সক্রিয় ছিলেন। তাকে ঘিরে এ ধরনের বিতর্ক ও মামলা সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কেউ বলছেন, “আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, তবে প্রক্রিয়াটি হতে হবে স্বচ্ছ ও মানবিক।”
অনেকেই এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে একটি পক্ষ এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও আখ্যা দিচ্ছেন। তদন্ত শেষে বিষয়টির প্রকৃত চিত্রই হয়তো স্পষ্ট হবে।
এ অবস্থায় গুলশান থানায় দায়েরকৃত মামলা দুটির তদন্তে পুলিশ কী প্রমাণ তুলে আনতে পারে, এবং ভিডিওতে দেখা নির্যাতনের বিচার হয় কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ