
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয় বলে মন্তব্য করেছেন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এখন ঋণ নিতে চাইছে না, বিশেষ করে আইএমএফের শর্ত মেনে ঋণ গ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, "আমরা কোনোরকম শর্তে ঋণ নিতে চাই না। আমাদের অর্থনীতি এখন অনেক বেশি স্থিতিশীল এবং সতর্ক থাকতেই হবে, যাতে অতিরিক্ত ঋণের বোঝা আমাদের ওপর না এসে পড়ে। বাজেটে সাপোর্টের অর্থ ৫ বছরের মধ্যে ফেরত দিতে হয়, যা ২০ বছরের জন্য হতে পারে না।" তিনি আরও বলেন, "আইএমএফ টাকা দিলেই আমরা নেবো না। ঋণ যদি নিতেই হয়, তবে তা অত্যন্ত হিসাব করে নেওয়া হবে, যাতে পরবর্তীতে রেট ডাউনের কারণে বিশাল পরিমাণে টাকা শোধ করতে না হয়।"
প্রসঙ্গত, গত ৯ মাস ধরে বাংলাদেশ আইএমএফের অর্থ সাহায্য পাচ্ছে না। এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে "একটা শক্ত পদক্ষেপ" নেওয়া হবে। "আমরা যদি সিদ্ধান্ত না নেই, দেখতে পাবেন, কতজনের চাকরি চলে যায়।"
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক ভালো অবস্থায় আছে, বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে অনেক ভালো ফলাফল আমরা দেখেছি।" তিনি দাবি করেন, দেশে ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট এবং রিজার্ভের স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে, এবং আইএমএফের ঋণ ছাড়াই সরকার সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, "এই সরকারের অধীনে আমরা আইএমএফ থেকে কোনো টাকা পাইনি। অথচ আইএমএফের চাপ ছাড়াই আমরা অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে সক্ষম হয়েছি।" তিনি আরো জানান, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। তিনি জানান, এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রজেক্ট সাপোর্টও পাওয়া যাবে এবং ভবিষ্যতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংক ও ফান্ড থেকে সহায়তা পাওয়া যাবে।
বিশ্বব্যাংক এবং এআইআইবি'র মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কও শক্তিশালী রয়েছে, তবে আইএমএফের কিছু শর্তে বাংলাদেশ রাজি নয়। আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য একাধিক শর্তের মধ্যে রয়েছে এনবিআরের পৃথকীকরণ এবং ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটের ওপেনিং। তবে, এসব শর্ত বাস্তবায়ন না করেও বাংলাদেশ সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নতি নিশ্চিত করেছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, "আইএমএফ থেকে কিছুটা সহায়তা পাওয়ার পাশাপাশি, বাংলাদেশের জন্য ওপেকফান্ড, আইএফসি ও অন্যান্য ব্যাংক থেকেও সহায়তা পাওয়া যাবে। ওপেকফান্ডের সঙ্গে ১০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে এবং আইএফসি’এর সাথে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে, যা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করা হবে।"
তিনি আরও বলেন, "এছাড়া, ইউএস প্রেসিডেন্ট ও তাঁর অফিসের লোকজনের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য বাংলাদেশের সফর সফল হয়েছে। বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক মহলের অনেক মন্ত্রী বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ইউএস প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সরকারের কাছে।"
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আরো জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাংক, এআইআইবি, আইএমএফ, আইওএম, ওপেক ফান্ড এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফান্ডের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও জোরালো হতে চলেছে, এবং তারা সকলেই বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
পরিশেষে, অর্থ উপদেষ্টা বলেন, "বাংলাদেশ এখন আর আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয়। আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী, এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমরা আন্তর্জাতিক সাহায্য ছাড়াও উন্নতি করতে সক্ষম হবো।"
বাংলাবার্তা/এমএইচ