
ছবি: সংগৃহীত
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ১৯৭৪ সালের ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’-এর স্মৃতি সংরক্ষণ এবং সংশ্লিষ্ট পরিবারদের কল্যাণে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে একটি নতুন অধিদপ্তর—‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’। তবে সম্পূর্ণ কাঠামো অনুযায়ী নয়, বরং মাত্র এক-তৃতীয়াংশ চাহিদা অনুযায়ী সীমিত পরিসরে শুরু হচ্ছে অধিদপ্তরটির কার্যক্রম। অস্থায়ীভাবে এটি পরিচালিত হবে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন কার্যালয় থেকে। অধিদপ্তরটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিক গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। গেজেটে বলা হয়, শহিদ ও আহত ছাত্র-জনতার তালিকা সংরক্ষণ, গেজেট প্রকাশ, তাদের কল্যাণসাধন, গণকবর সংরক্ষণ, ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে গবেষণা এবং নীতিমালা প্রণয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে এই নতুন অধিদপ্তর। একইসঙ্গে প্রতি বছর ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করার সরকারি উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
তবে প্রস্তাবিত কাঠামোর তুলনায় অধিদপ্তরের বাস্তবায়ন অনেকটাই সীমিত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৬৩টি জনবল পদ এবং ৮টি যানবাহনের প্রস্তাব দেওয়া হলেও চূড়ান্ত অনুমোদনে তা কমিয়ে মাত্র ২০টি পদ এবং ২টি গাড়ি নির্ধারণ করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের যৌথ সিদ্ধান্তে এ কাটছাঁট করা হয়।
প্রথম ধাপে যে ২০ জন জনবল দিয়ে কাজ শুরু হবে, তার মধ্যে থাকবেন অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার একজন মহাপরিচালক, উপসচিব পদমর্যাদার একজন পরিচালক, সিনিয়র সহকারী সচিব মর্যাদার একজন উপপরিচালক, সহকারী সচিব মর্যাদার দুইজন সহকারী পরিচালক, একজন সহকারী প্রোগ্রামার, একজন সহকারী হিসাবরক্ষক, দুইজন কম্পিউটার অপারেটর, দুইজন উচ্চমান সহকারী, তিনজন অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, চারজন অফিস সহায়ক এবং দুইজন গাড়িচালক।
এই অধিদপ্তর গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছরের নভেম্বরে, যখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়। এরপর ১৮ ডিসেম্বর একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সর্বসম্মতিক্রমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ৬৩টি পদসহ একটি অনুবিভাগ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ৭ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কাটছাঁট ও যাচাই-বাছাই শেষে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে কার্যক্রমের অনুমোদন মেলে।
এই অধিদপ্তরকে ঘিরে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এটিকে গুরুত্বপূর্ণ সূচনা হিসেবে দেখছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও বীরপ্রতীক ফারুক-ই-আজম বলেন, “আমরা অনেক বড় কাঠামোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু শুরুতে যা পেয়েছি, তাতেই কাজ শুরু হবে। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে পরিধি বাড়ানো হবে।”
মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরীও আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “বর্তমানে ২০ জন জনবল নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও, একে বিস্তৃত করার সুযোগ রয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ এবং আমরা ধাপে ধাপে এর পরিধি ও কার্যক্রম বাড়াতে চাই।”
এই অধিদপ্তরটির মূল লক্ষ্য হবে ১৯৭৪ সালের ৫ আগস্টে সংঘটিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’-এর শহিদদের স্মৃতি রক্ষা এবং সে সময় আহত ও নির্যাতিত ছাত্র-জনতার পরিবারগুলোর কল্যাণ নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, গণকবর সংরক্ষণ, ইতিহাস গবেষণা এবং শিক্ষামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনাও রয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’কে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে চিহ্নিত করে এটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপে সংরক্ষণের এই উদ্যোগ নতুন মাত্রা তৈরি করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ