
ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ভারতকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “একটি ইট এলে তার জবাবে আমরা পাথর ছুড়ব।” পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে ভারত যেভাবে সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সিন্ধু নদের পানি বন্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তাতে ইসলামাবাদ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার পাকিস্তান সিনেটে দেয়া এক জোরালো বক্তব্যে দার ভারতীয় সরকারকে সতর্ক করে বলেন, ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
এদিন সিনেটে দেয়া বক্তব্যে ইসহাক দার দাবি করেন, কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে হামলার ঘটনাকে ব্যবহার করে ভারত রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে এবং আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিল করার ষড়যন্ত্র করছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, পহেলগাঁও হামলার দায় পাকিস্তানের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ভারত ভিত্তিহীন অভিযোগের পেছনে সামরিক পরিকল্পনা সাজাচ্ছে।
দার বলেন, “ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিল করতে পারে না। এ চুক্তি শুধু দুই দেশের মধ্যে নয়, বরং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি। ভারতের যেকোনো একতরফা পদক্ষেপ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।” তিনি আরও জানান, চীন ও তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি শক্তিধর রাষ্ট্র পাকিস্তানের কূটনৈতিক অবস্থানকে সমর্থন দিয়েছে।
এর আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ আসিফ বলেন, ভারত পাকিস্তানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং ইসলামাবাদ এটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি রয়টার্সকে বলেন, “আমাদের অস্তিত্বের প্রতি সরাসরি হুমকি তৈরি হলে পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারে পিছপা হবে না।”
এই উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে হওয়া সাম্প্রতিক বন্দুকধারী হামলা। ভারত দাবি করছে, এই হামলার পেছনে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসীদের হাত রয়েছে। যদিও পাকিস্তান তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, “ভারতের কাছে কোনো প্রমাণ নেই।”
কাশ্মীরের এই হামলার পরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার রাতে নয়াদিল্লিতে তার বাসভবনে উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠক করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ অনীল চৌহান, তিন বাহিনীর প্রধান, ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদি সশস্ত্র বাহিনীকে যেকোনো প্রতিশোধমূলক হামলার জন্য ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেন।
ভারতের গণমাধ্যম NDTV জানিয়েছে, মোদি ওই বৈঠকে বলেন, “ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্বের ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। কবে এবং কোথায় আঘাত হানতে হবে তা নির্ধারণ করার অধিকার তাদের রয়েছে।” মোদি আরও বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিনাশই ভারতের জাতীয় সংকল্প।”
পরে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারারও এক পোস্টে দাবি করেন, ভারতের কাছ থেকে পাকিস্তানের কাছে গোয়েন্দা সংস্থা নির্ভর বিশ্বাসযোগ্য তথ্য এসেছে যে, আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারত সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে।
তিনি বলেন, “পাকিস্তান যেকোনো আগ্রাসনের জবাবে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে। আঞ্চলিক পরিস্থিতি ভয়াবহ পরিণতির দিকে গেলে তার দায়ভার সম্পূর্ণ ভারতের।”
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মোদি বুধবার বেলা ১১টায় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটি (CCS)-এর সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। একই দিন রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটি (CCPA) ও অর্থনৈতিক কমিটির সঙ্গেও আলোচনা করবেন তিনি। এতে রাজনাথ সিং, অমিত শাহ, নির্মলা সীতারামণ, নিতিন গড়কড়ি, জেপি নাড্ডা প্রমুখ জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রী মোদি সীমান্ত বন্ধ, সিন্ধু চুক্তি বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সরকারি সূত্র জানিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের অবস্থান এখন অনেক বেশি আগ্রাসী এবং প্রতিশোধপরায়ণ, যা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে নাড়িয়ে দিতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে কূটনৈতিক সংযম ও আন্তর্জাতিক সংহতিই উত্তেজনা প্রশমনের একমাত্র উপায়। পাকিস্তান-ভারতের এই টানাপোড়েন এখন শুধু উপমহাদেশ নয়, গোটা বিশ্বকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে।
উৎস: জিও নিউজ, ডন, এনডিটিভি, রয়টার্স, আল জাজিরা
বাংলাবার্তা/এমএইচ