
ছবি: সংগৃহীত
কাশ্মীরের পাহেলগাম এলাকায় সশস্ত্র বন্দুকধারীদের হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিক্রিয়া হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন হামলার জবাব দেওয়ার জন্য। দেশটির সরকারি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মোদি এই নির্দেশ দেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতের তিন বাহিনীর প্রধান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং প্রতিরক্ষা সচিব। বৈঠকে মোদি বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর আঘাত হানাই ভারতের জাতীয় সংকল্প। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী পেশাদারিত্ব এবং দক্ষতায় যেকোনো জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।”
এই নির্দেশের অর্থ, সেনাবাহিনী এখন প্রতিক্রিয়ার কৌশল, সময় ও লক্ষ্য নির্ধারণে সম্পূর্ণ স্বাধীন। এতে সীমান্তের ওপারে বা অন্য কোথাও ভারতের পক্ষ থেকে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। একইসঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করার শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
ভারত সরকার দাবি করছে, জম্মু-কাশ্মীরের পাহেলগামে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তার পেছনে পাকিস্তানের মদদ রয়েছে। যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, “আমরা আমাদের বাহিনী জোরদার করেছি কারণ ভারতীয় সামরিক পদক্ষেপ আসন্ন বলে মনে হচ্ছে। আমরা কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেছি, কারণ পরিস্থিতি এখন সে দিকেই গড়াচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “যদি আমাদের অস্তিত্বের ওপর সরাসরি হুমকি আসে, তবে তখনই কেবল পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।”
পাকিস্তানের আইন ও বিচার প্রতিমন্ত্রী আকিল মালিক জানান, ভারত যদি সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে বা একতরফাভাবে বাতিলের পথে এগোয়, তাহলে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে যাবে।
এই প্রেক্ষাপটে দুই দেশের কূটনৈতিক এবং সামরিক উত্তেজনা এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহনও এদিন তিনটি আধা-সামরিক বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন, যা পরিস্থিতির গুরুত্বকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
পরিস্থিতি এখন কেবল সামরিক উত্তেজনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং কূটনৈতিক ও আইনি দ্বন্দ্বেও গড়াতে পারে। এই সংকট কীভাবে সামাল দেওয়া হবে এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এ মুহূর্তে উত্তেজনার মাত্রা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সময়ই বলে দেবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ