
ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের জন্য বিপদে পড়েছে বিশাল মাপের ২ হাজার পাইপ ও যন্ত্রপাতি, যেগুলোর মোট মূল্য শত কোটি টাকা। এগুলো ড্রেজিং কাজের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছিল ২০১৯ সালে, কিন্তু দীর্ঘ ছয় বছরেও এই পণ্যগুলো ছাড় করা হয়নি। একদিকে আইনি জটিলতা, অন্যদিকে স্থান সংকটের কারণে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এগুলো নিলামে তুলতে পারছে না।
অথচ কেন আটকে গেছে পণ্য?
২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর, চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছিল চ্যাঞ্জিং ড্রেজিং প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে আমদানি করা এক হাজার ৯০০টি পাইপ এবং আটটি কনটেইনারে পণ্য। কিন্তু আসল বিপত্তি ঘটে, যখন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নতুন পাইপের বদলে ব্যবহৃত পাইপ আমদানি হওয়ার কারণে ডেলিভারি আটকে দেয়। সেক্ষেত্রে কাস্টমস পণ্যগুলো নিলামে তোলার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে।
কাস্টমস এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের দুর্ভোগ
এই আইনি জটিলতার কারণে কাস্টমস হাউজের শেডে বিশাল আকারের পাইপগুলো পড়ে থাকায় চরম সংকটে পড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, পণ্যগুলো নিলামে তুলতে হলে প্রথমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রয়োজন। একদিকে পণ্যগুলো বন্দরে স্থান সংকট সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে সরকারী সংস্থাগুলোর জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, পাইপগুলোর কারণে বন্দরে অন্যান্য পণ্য রাখা সম্ভব হচ্ছে না, তাই সেগুলো কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
কিন্তু কেন এত সময় লেগেছে?
চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন জানান, একাধিক বার চেষ্টা করার পরও পাইপগুলো নিলামে তোলার বিষয়ে কোনো প্রতিকার মিলছে না। আইনি জটিলতার পাশাপাশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া এই পাইপগুলো নিলামে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। পাইপগুলো সিঙ্গাপুর হয়ে চীনের কাছ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়েছিল, তবে ব্যবহৃত অবস্থায় আমদানির কারণে এর ডেলিভারি আটকে গেছে।
অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা
বিশাল আকারের এই পাইপগুলো হস্তান্তর করার ফলে কাস্টমস হাউজের কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। একদিকে যেমন স্থান সংকটের কারণে অন্যান্য পণ্য রাখার জায়গা মিলছে না, তেমনি সঠিক সময়ে নিলাম না হওয়ায় সরকারি সংস্থাগুলোর আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে, কারণ অন্য পণ্য রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা মুক্ত হতে পারছে না।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পণ্যগুলো নিলামে তোলার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছেন। একই সঙ্গে সি অ্যান্ড এফ প্রতিষ্ঠানও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পরই এগুলো নিলামে তোলা হবে।
মূল্য এবং পরিমাণ:
এই ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ওজনের পাইপগুলোর মোট আমদানিমূল্য ছিল ৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। একদিকে পাইপের মূল্য, অন্যদিকে কনটেইনারে থাকা যন্ত্রপাতির মূল্য ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে অন্য সব খরচও জড়িত, যা সরকারি দুই সংস্থাকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে।
এখানে কাস্টমস হাউজের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো আইনি জটিলতা এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমতির জন্য অপেক্ষা। এর ফলে পণ্যগুলো দিনের পর দিন বন্দরে পড়ে থাকছে, যার ফলে স্থানে সংকট ও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ