
ছবি: সংগৃহীত
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এক নতুন মোড় দেখা দিয়েছে। দ্বিপক্ষীয় এই উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের মাঝে আলোচনার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছে বেইজিং। শুক্রবার (২ মে) চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসা আলোচনার প্রস্তাব মূল্যায়ন করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন এই খবর নিশ্চিত করেছে।
চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি একাধিকবার বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে বাণিজ্য আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মুখপাত্র বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো বার্তাগুলো আমরা পর্যালোচনা করছি। চীন সবসময় সমস্যা সমাধানে সংলাপকে সমর্থন করে, তবে তার আগে কিছু মৌলিক বিষয় পরিষ্কার হওয়া জরুরি।"
চীনের ভাষ্য অনুযায়ী, এই আলোচনা তখনই ফলপ্রসূ হতে পারে যদি যুক্তরাষ্ট্র তাদের 'একতরফা এবং উসকানিমূলক' নীতিমালার পরিবর্তন ঘটায়। মুখপাত্র আরও বলেন, "বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্রই। এখন যদি তারা আলোচনায় বসতে চায়, তবে তাদের আন্তরিকতা প্রমাণ করতে হবে। এর অন্তর্গত হবে—অন্যায়ভাবে আরোপ করা একতরফা শুল্ক বাতিল করার বাস্তবিক পদক্ষেপ গ্রহণ।"
চীন জোর দিয়ে বলেছে, আলোচনার পূর্বশর্ত হিসেবে ওয়াশিংটনকে এমন কিছু সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে, যা চীনের অর্থনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থী। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলো—যেমন চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া—এই উত্তেজনার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এই পরিস্থিতির জবাবে চীনও পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। বেইজিং ঘোষণা করেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। এই পাল্টা সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বাজারে উদ্বেগ তৈরি করেছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর চাপ আরও বাড়িয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে এমন এক স্নায়ুযুদ্ধ গোটা বিশ্বের পণ্যমূল্য, বিনিয়োগ পরিস্থিতি এবং উৎপাদন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ইতিমধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, যদি দুই পক্ষ কোনো সমঝোতায় না পৌঁছায়, তাহলে বিশ্বজুড়ে প্রবৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের সামনে দাবি করেছিলেন যে তার প্রশাসন ইতোমধ্যে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরু করেছে। যদিও চীনা কর্তৃপক্ষ সে সময় এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিল। তবে শুক্রবারের এই বিবৃতিতে প্রথমবারের মতো চীন প্রকাশ্যে আলোচনার সম্ভাবনা স্বীকার করেছে, যদিও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা শর্তসাপেক্ষেই আলোচনা করতে আগ্রহী।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই আভাস দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এক ইতিবাচক বাঁক হতে পারে। তবে সেটি কার্যকর হবে কিনা, তা নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসা পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর। ট্রাম্প প্রশাসন যদি চীনের শর্তগুলোর বিষয়ে নমনীয়তা দেখায় এবং আলোচনার পরিবেশ তৈরি করে, তাহলে হয়তো এই বাণিজ্য যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য একটি যৌথ পথ উন্মুক্ত হতে পারে।
এখন আন্তর্জাতিক পরিসর অপেক্ষায়—চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই একে অন্যকে ছাড় দিয়ে আলোচনার পথে হাঁটবে, নাকি দ্বন্দ্ব আরও ঘনীভূত হবে? আগামীর বিশ্ব অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভর করছে এই দুই পরাশক্তির সিদ্ধান্তের ওপর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ