
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিচার এবং দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে আজ শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় এক বিক্ষোভ সমাবেশ করতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সমাবেশটি বিকেল ৩টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে অনুষ্ঠিত হবে। এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এনসিপি তাদের রাজনৈতিক অবস্থান এবং সরকারের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দিতে চায় বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১ মে) দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আওয়ামী লীগকে ‘গণহত্যার জন্য দায়ী একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী’ হিসেবে চিহ্নিত করে তার বিচার দাবি এবং দলটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে। সমাবেশটি আয়োজন করছে এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখা।
এ প্রসঙ্গে এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শাহবাগ এলাকায় গণসংযোগ এবং লিফলেট বিতরণকালে বলেন, "আওয়ামী লীগ আর কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়, এটি এক ফ্যাসিবাদী দমনযন্ত্রে পরিণত হয়েছে। জনগণের রক্তের দাগ লেগে আছে এদের হাতে। তারা আর রাজনীতি করার নৈতিক বা গণতান্ত্রিক অধিকার রাখে না।"
তিনি আরও বলেন, "গত জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের জনগণ স্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা বিচারের কাঠগড়ায় ওঠার যোগ্য হয়েছে। তাই এখন প্রয়োজন এই দলের দ্রুত বিচার ও নিষিদ্ধ ঘোষণা।"
হাসনাত আব্দুল্লাহ অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বারবার কুক্ষিগত করে একদলীয় কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের মাধ্যমে দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলো দলীয় দখলে চলে গেছে। তিনি বলেন, “এই অবস্থায় যদি আবারও আওয়ামী লীগকে কোনো প্রকারে রাজনৈতিক স্বীকৃতি বা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে সেটি হবে জনগণের রায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”
তিনি দাবি করেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রধান দায়িত্ব হবে এমন সব রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করা, যারা গণতন্ত্রবিরোধী ভূমিকা পালন করেছে এবং জনগণের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছে। এনসিপি নেতার মতে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে প্রধান অন্তরায় এখন আওয়ামী লীগ। সেই কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা প্রতিহত করতে হবে।
এদিকে আজকের সমাবেশ ঘিরে এনসিপির পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা পর্যায় থেকে নেতা-কর্মীরা র্যালি ও ব্যানারসহ এসে সমাবেশে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন দলটির ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক আনিসুর রহমান খোকন।
তিনি বলেন, “এটা আমাদের নৈতিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব। আমরা শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিকভাবে আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে জাতির সামনে দৃঢ় বার্তা তুলে ধরতে চাই।”
দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিক্ষোভ কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখবেন। সমাবেশ শেষে একটি সংক্ষিপ্ত র্যালি বের করারও পরিকল্পনা রয়েছে, যা বায়তুল মোকাররম এলাকা থেকে শুরু করে পল্টন পর্যন্ত যাবে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে সরব ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে, জুলাইয়ের ‘গণ-অভ্যুত্থান’ এবং নির্বাচনী সংস্কার দাবিতে দলটি রাজধানী ও বিভিন্ন জেলা শহরে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করেছে।
তবে সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো এনসিপির দাবি বা কর্মসূচি নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এই প্রেক্ষাপটে আজকের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানা গেছে। সমাবেশ স্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ