
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত কমিশনকে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়, বরং একটি জাতীয় উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করেছেন কমিশনের সহ-সভাপতি এবং খ্যাতিমান রাজনীতি বিশ্লেষক ড. আলী রীয়াজ। শনিবার (৩ মে) সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ১২-দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে এক সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তিনি। আলোচনার সূচনায় ড. রীয়াজ স্পষ্ট করে বলেন, "ঐকমত্য কমিশনের কোনো পক্ষপাত নেই। আমাদের কাজ কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা নয়, বরং জাতীয় স্বার্থে সবাইকে একত্রিত করা।"
এই বৈঠকটি ছিল কমিশনের ধারাবাহিক সংলাপ কার্যক্রমের অংশ, যার মূল লক্ষ্য হলো দেশ গঠনে একটি সর্বসম্মত জাতীয় সনদ প্রণয়ন। সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে ড. রীয়াজ বলেন, "রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু একটি রাষ্ট্রকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে আমাদের মতপার্থক্য পেরিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। নেতাকর্মীরা যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে কথা বলেন এবং একই সঙ্গে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা দেখান, তবেই জাতীয় ঐক্য সম্ভব।"
তিনি আরও জানান, কমিশনের কাজ কোনো দলকে কোণঠাসা করা নয় বরং একটি সুনির্দিষ্ট, অংশগ্রহণমূলক রূপরেখা তৈরির মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার গঠনমূলক বিকল্প তৈরি করা। ড. আলী রীয়াজ বলেন, "সব বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু মূল রাষ্ট্র কাঠামো, প্রশাসন সংস্কার এবং গণতন্ত্রচর্চার মৌলিক স্তম্ভগুলোর ওপর ভিত্তি করে আমরা একটি জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি।"
সংলাপে আলোচ্য বিষয় হিসেবে উঠে আসে সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবগুলোর প্রতি সমর্থন এবং দ্বিমতগুলোর তালিকা। জানা যায়, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট সংস্কার কমিশনের দেওয়া ১১২টি প্রস্তাবে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে, ২৬টি প্রস্তাবের বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সব প্রস্তাবেই তারা একমত পোষণ করেছে। এই অবস্থান স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে জোটটি সংলাপ ও সংস্কারের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগোচ্ছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, "আমাদের কাজ হচ্ছে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি গড়ে তোলা। তাই কমিশন কারও প্রতিপক্ষ নয়, বরং একটি সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করছে।"
এদিনের বৈঠকে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারা সংলাপের এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে স্বাগত জানান এবং একটি গণমুখী, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আলোচনা শেষে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবিষ্যতে আরও রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এভাবে ঐকমত্য কমিশন এক নতুন রাজনৈতিক ধারার সূচনা করেছে, যেখানে প্রতিপক্ষ নয়, বরং সহযোগিতা ও দায়িত্ববোধের ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। তাদের মূল লক্ষ্য একটি গ্রহণযোগ্য ও সর্বজনগ্রাহ্য জাতীয় সনদ তৈরি করে দেশকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেওয়া।
এ জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য একটি সুসংগঠিত, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার দিশা দেখাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন। এই প্রচেষ্টায় রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকেও সম্পৃক্ত করার কথা বলেছেন ড. রীয়াজ, যার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য শুধু কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবিক অর্থেই রূপ পাবে।
এটি শুধু একদিনের সংলাপ নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদি রাষ্ট্রনায়কত্বের উদ্যোগ – এমন বার্তাই যেন তুলে ধরছেন আলী রীয়াজ ও তাঁর সহকর্মীরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ