
ছবি: সংগৃহীত
সারাদেশের দেড় হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য স্মার্ট টিভি ও ল্যাপটপ সরবরাহ করতে যাচ্ছে সরকার। ‘নেক্সট জেনারেশন প্রাইমারি এডুকেশন প্রোগ্রাম (এনপিইপি)’ শিরোনামে একটি নতুন কর্মসূচির আওতায় এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে।
মূলত চার বছরের বেশি বয়সি শিশুদের জন্য পরিচালিত ২ বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি কার্যক্রমকে আরও আধুনিক, আনন্দময় ও কার্যকর করে তুলতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিপিইর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিনির্ভর এই শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে শিশুদের শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়বে, শেখার পদ্ধতি হবে আরও প্রাণবন্ত ও অংশগ্রহণমূলক।
প্রযুক্তির মাধ্যমে শিশুর শিক্ষার নতুন অভিজ্ঞতা
৩০ এপ্রিল, বুধবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতোমধ্যে কর্মসূচির একটি খসড়া উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন করা হয়েছে। সেখানে শিক্ষা উপকরণ হিসেবে স্মার্ট টিভি ও ল্যাপটপ সরবরাহের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ডিজিটাল কনটেন্ট প্রদর্শন করে শেখানো যাবে, শিক্ষকদের উপস্থাপন দক্ষতা বাড়বে এবং সামগ্রিকভাবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব হবে। তবে এই সরঞ্জামগুলো সরবরাহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড ও শর্ত পূরণকারী বিদ্যালয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
কোন কোন শর্ত মানতে হবে বিদ্যালয়গুলোকে?
ডিপিই জানিয়েছে, যেসব বিদ্যালয়ে এই প্রযুক্তি সরবরাহ করা হবে, সেগুলোকে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে। যেমন—
-
প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য আলাদা, সজ্জিত ও কার্যকর শ্রেণিকক্ষ থাকতে হবে।
-
শ্রেণিকক্ষে দরজা-জানালা মজবুতসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকতে হবে।
-
অফিস সহায়ক ও নৈশপ্রহরী নিয়োজিত থাকতে হবে।
-
একজন নির্ধারিত শ্রেণিশিক্ষক থাকতে হবে যিনি আইটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও ডিজিটাল কনটেন্ট পরিচালনায় পারদর্শী।
-
সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে ৪ বছর বা তার বেশি বয়সি শিশুদের জন্য ২ বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু থাকতে হবে।
-
তুলনামূলকভাবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি থাকতে হবে।
বিভাগভিত্তিক বরাদ্দ ও নির্বাচন প্রক্রিয়া
সারাদেশের বিদ্যালয়গুলো থেকে নির্ধারিত কোটা অনুযায়ী বিদ্যালয় নির্বাচনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বিভাগভিত্তিক বিদ্যালয় সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে এভাবে—
-
ঢাকা বিভাগ: ২৫০টি বিদ্যালয়
-
চট্টগ্রাম বিভাগ: ২০০টি
-
খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ: প্রতিটিতে ২০০টি করে
-
বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ: প্রতিটিতে ১৫০টি করে বিদ্যালয়
এই বরাদ্দ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপপরিচালকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেন তারা দ্রুত নির্ধারিত শর্ত পূরণকারী বিদ্যালয় চিহ্নিত করে তালিকা পাঠান।
৪ মে’র মধ্যে তালিকা পাঠানোর সময়সীমা
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ৪ বছর বয়সি শিশুদের জন্য ২ বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক কার্যক্রম চালু থাকা বিদ্যালয়গুলোর মধ্য থেকে শর্ত অনুযায়ী নির্বাচন করে তালিকা তৈরি করতে হবে। এই তালিকা নির্ধারিত তথ্য ছকে পূরণ করে ৪ মে’র মধ্যে ই-মেইল ([email protected]) ও হার্ড কপির মাধ্যমে প্রেরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্মার্ট টিভি ও ল্যাপটপ সরবরাহের এই পদক্ষেপ আগামী প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিনির্ভর ও আনন্দময় শিক্ষায় প্রস্তুত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই কর্মসূচি বাংলাদেশের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামোকে আন্তর্জাতিক মানের দিকে নিয়ে যেতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন হলে অন্যান্য শ্রেণিতেও ধাপে ধাপে ডিজিটাল শিক্ষার বিস্তার ঘটানো সম্ভব হবে বলে মত দিয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ