
ছবি: সংগৃহীত
বিশেষ পরিস্থিতির সরকার হতে পারে 'সমাধানের পথ' নয়, বরং একান্ত প্রয়োজনে নেওয়া সাময়িক পদক্ষেপ — মনে করেন তারেক রহমান। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে নির্বাচন, জনঅধিকার, সরকারের জবাবদিহি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার গুরুত্ব।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, বিশেষ পরিস্থিতির সরকারকে পুরোপুরি অবৈধ বলা না গেলেও, সেটি জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের বিকল্প হতে পারে না। বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেলে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত শ্রমিক দলের সমাবেশে যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “গত দেড় দশকে দেশের মানুষকে এক ধরনের দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক গলা টিপে ধরা পরিবেশে আটকে রাখা হয়েছিল। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলেও প্রকৃত অর্থে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিশেষ পরিস্থিতির সরকার কোনো গণতান্ত্রিক কাঠামোর বিকল্প হতে পারে না। জনগণকে তার প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার অধিকার ফিরিয়ে না দিলে বাস্তবিক অর্থে পরিবর্তন আসে না।”
তারেক রহমান দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, যেকোনো সংকট, মতপার্থক্য বা উত্তরণের পথ রাজনৈতিকভাবে নির্ধারিত হতে হবে জনগণের সম্মতি ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে। স্বেচ্ছাচারিতা তখনই জন্ম নেয়, যখন একক নেতৃত্ব বা গোষ্ঠীকে অপরিহার্য ভাবা হয় এবং বিকল্পকে নিষিদ্ধ বা অসম্ভব করে তোলা হয়। এই সংস্কৃতি গণতন্ত্রের পরিপন্থী।”
বিএনপির ভূমিকায় ‘জনঅধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি’
বিএনপির রাজনীতিকে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি বলে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “বিএনপি সরকারে থাকাকালে কখনোই দমন-পীড়নের রাজনীতি করেনি। বরং আমরা জনগণের অধিকারকে সম্মান করে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছি। এজন্যই আমাদের নেতাকর্মীদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়নি। মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে নয়, বরং কথা শুনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিএনপি রাষ্ট্র চালিয়েছে।”
তারেক রহমান শ্রমিক শ্রেণির প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, “শ্রমিকরাই গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকাশক্তি। অথচ তাদের কণ্ঠস্বর আজ রাজনৈতিক পরিসরে অনুপস্থিত। এর মূল কারণ হচ্ছে—নির্বাচিত প্রতিনিধির অনুপস্থিতি। যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়, সেই সরকারই শ্রমিকদের কথা শুনতে বাধ্য থাকে। কিন্তু আজ জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন সরকার কেবল ধনীদের স্বার্থ রক্ষা করছে।”
নির্বাচন ও রোডম্যাপ প্রশ্নে সরকারের দ্ব্যর্থতা
বর্তমান সরকারের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, “ইতোমধ্যে জনগণের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের নামে বিভাজন সৃষ্টির একটি নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা হচ্ছে। সরকার এমন একটি কাঠামো দাঁড় করাতে চাইছে, যাতে সংস্কার প্রক্রিয়া ও নির্বাচনী আয়োজন পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড় করানো যায়।”
তিনি সরকারকে আহ্বান জানান, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি স্পষ্ট, সময়াবদ্ধ রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। এতে করে বিভ্রান্তি কেটে যাবে এবং জনগণের আস্থা ফিরে আসবে। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তরা নয়, বরং জনআস্থাভাজন নেতৃত্বের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জরুরি।”
মিয়ানমার ইস্যুতে স্বচ্ছতা চাইলেন তারেক
মিয়ানমারকে ‘মানবিক করিডর’ দেয়ার প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে তারেক রহমান বলেন, “এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের উচিত ছিল জাতিকে জানানো এবং জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে জনগণের অজান্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া একপ্রকার অবহেলা। এটি কেবল গোপন চুক্তির বিষয় নয়, এটি জনগণের অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।”
তিনি আরও বলেন, “সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার কেবল নির্বাচিত সরকারের। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই কেবল এ ধরনের বিষয়ের দায়িত্ব নিতে পারেন। মিয়ানমার, ভারত বা অন্য কোনো রাষ্ট্র নয়—আমাদের প্রথম ও শেষ চিন্তা হওয়া উচিত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা। এটাই প্রকৃত দেশপ্রেম।”
দেশের ভবিষ্যতের প্রশ্নে পুনরায় নির্বাচনের ডাক
বক্তব্যের শেষাংশে তারেক রহমান বলেন, “একটি বৈষম্যহীন, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের মানুষ এখন আর ফাঁকা আশ্বাস চায় না। তারা চায় একটি জবাবদিহিমূলক, কার্যকর, স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকার।”
তারেক রহমানের বক্তব্যে স্পষ্ট বার্তা ছিল—অন্তর্বর্তী সরকার বা অস্বচ্ছ চুক্তির চেয়ে জনগণের সম্মতিতেই গঠিত সরকারই হতে পারে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথনির্দেশক।
বাংলাবার্তা/এমএইচ