
ছবি: সংগৃহীত
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চলতি মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে ইতিহাস গড়লেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রাফিনিয়া। বুধবার রাতে মন্তুজুইকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ৩-৩ গোলে ড্র করা ম্যাচে ফেরান তোরেসের গোলের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা করেন এই আক্রমণভাগের খেলোয়াড়। আর এই অ্যাসিস্টের মাধ্যমেই তিনি পৌঁছে গেলেন এক অনন্য উচ্চতায়—বার্সেলোনার ইতিহাসে এক মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ গোল অবদানকারীর তালিকায় এককভাবে শীর্ষে।
চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত রাফিনিয়ার গোলসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২টি এবং অ্যাসিস্ট ৮টি। মোট ২০ গোল অবদান নিয়ে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন বার্সার সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসিকে। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ২০১১-১২ মৌসুমে করেছিলেন ১৪ গোল ও ৫ অ্যাসিস্ট—মোট ১৯ গোল অবদান। মেসির সেই রেকর্ডই এতদিন ধরে বার্সেলোনার ইতিহাসে এক মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ অবদানের নজির হিসেবে বিবেচিত ছিল।
রাফিনিয়া শুধু যে মেসিকে ছাড়িয়েছেন তাই নয়, তিনি এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল অবদানের দিক থেকে এখন ইউরোপের সেরাদের কাতারেও জায়গা করে নিয়েছেন। তার এই ২০ গোল অবদানের রেকর্ডে তিনি এখন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর (২০১৫-১৬ মৌসুমে ২০ অবদান) এবং রবার্ট লেভানদোভস্কির (২০১৯-২০ মৌসুমে ২০ অবদান) পাশে বসেছেন।
সবচেয়ে বড় কথা, রাফিনিয়ার সামনে এখনো সুযোগ রয়েছে রোনালদোর সর্বোচ্চ রেকর্ড স্পর্শ কিংবা ভাঙার। ২০১৩-১৪ মৌসুমে রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ১৭ গোল ও ৪ অ্যাসিস্টসহ মোট ২১টি গোল অবদান রেখেছিলেন—যা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এখনো এক মৌসুমে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অবদান।
রাফিনিয়ার বর্তমান ২০ গোল অবদান যদি একটুও বাড়ে, তিনি এই রেকর্ড স্পর্শ করবেন কিংবা এককভাবে ইতিহাসে নিজের নাম লিখিয়ে ফেলবেন। বার্সেলোনার সামনে এখনো দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ বাকি, যেখানে তারা মিলানকে মোকাবেলা করবে সানসিরোর ঐতিহাসিক ভেন্যুতে। সেই ম্যাচে রাফিনিয়ার পারফরম্যান্সই নির্ধারণ করতে পারে তার নাম ইতিহাসে কতটা উজ্জ্বলভাবে খোদাই হবে।
এদিকে, ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ম্যাচে রাফিনিয়ার আরও একটি দুর্দান্ত প্রচেষ্টা ছিল যা প্রায় গোল হয়ে যাচ্ছিল। প্রায় ২২ গজ দূর থেকে নেওয়া তার বুলেট গতির শট বারপোস্টে লেগে রিকোচেট করে ইন্টার গোলরক্ষক ইয়ান সোমারের গায়ে লাগে এবং পরবর্তীতে আত্মঘাতী গোল হিসেবে পরিগণিত হয়। যদিও স্কোরশিটে এই গোলের কৃতিত্ব তার নামে ওঠেনি, তবে বাস্তবে গোলের নেপথ্য নায়ক ছিলেন নিঃসন্দেহে রাফিনিয়াই। যদি এই গোলটি তার নামে যোগ হতো, তবে তার গোল অবদানের সংখ্যা হতো ২১, যা রোনালদোর রেকর্ড স্পর্শ করেই ফেলতো।
রাফিনিয়ার এই দুরন্ত ফর্ম বার্সার সামগ্রিক পারফরম্যান্সেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। কোয়ার্টার ফাইনালে ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়েই তিনি মেসিকে ছুঁয়ে ফেলেছিলেন। এরপর সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগে সেই রেকর্ড ভেঙে নিজের নাম নতুনভাবে ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা করলেন।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল অবদান রাখা খেলোয়াড়দের তালিকা বলছে, রাফিনিয়া এখন ইউরোপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা পারফরমারদের একজন। তার সামনে এখন কেবল রোনালদোর ২১ গোল অবদানের মাইলফলক। আরেকটি ম্যাচ বাকি থাকায়, ফুটবলবিশ্ব তাকিয়ে থাকবে এই ব্রাজিলিয়ানের দিকে—দেখার জন্য তিনি শেষ ধাপটিও স্পর্শ করতে পারেন কি না।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল অবদানকারী খেলোয়াড়রা:
-
ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো (রিয়াল মাদ্রিদ) – ২১ (২০১৩/১৪)
-
রাফিনিয়া (বার্সেলোনা) – ২০ (২০২৪/২৫)
-
ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো – ২০ (২০১৫/১৬)
-
রবার্ট লেভানদোভস্কি – ২০ (২০১৯/২০)
-
লিওনেল মেসি – ১৯ (২০১১/১২)
রাফিনিয়ার এই কীর্তি শুধু বার্সেলোনার জন্য নয়, ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের জন্যও এক বিশাল অর্জন। সানসিরোর দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে তার পারফরম্যান্সই হতে পারে এই মৌসুমে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের দিক পরিবর্তনের নিয়ামক।
বাংলাবার্তা/এমএইচ