
ছবি: সংগৃহীত
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টে বাংলাদেশ দল হার মানলেও আলো ছড়িয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ব্যাটে না হোক, বল হাতে নিজের জাত চেনাতে ভুল করেননি এই অফস্পিনার। পুরো ম্যাচজুড়ে তার দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্সে তিনি গড়েছেন একাধিক রেকর্ড। আর এর প্রভাব পড়েছে আইসিসি টেস্ট র্যাংকিংয়েও। সাপ্তাহিক হালনাগাদে দেখা যাচ্ছে, চার ধাপ এগিয়ে বোলারদের তালিকায় এখন ২৬ নম্বরে উঠে এসেছেন মিরাজ।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত একমাত্র টেস্ট ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ম্যাচের শেষ পাঁচ উইকেট একাই তুলে নেন মিরাজ। এই স্পেলে তিনি যেন ছিলেন দুর্দমনীয়। বল হাতে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ওপর দারুণ চাপ সৃষ্টি করেন, বোলিংয়ে বৈচিত্র্য আর নিখুঁত লাইন-লেন্থে করে তোলেন দুর্ভেদ্য এক ধাঁধা। দ্বিতীয় ইনিংসেও তেমনই ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন তিনি। প্রতিপক্ষের টপ অর্ডারকে চেপে ধরেন শুরুতেই এবং আরও একবার তুলে নেন ৫ উইকেট।
এক ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার এই কীর্তি তার ক্যারিয়ারে এবারই তৃতীয়বারের মতো ঘটলো। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে এই কৃতিত্ব আর কারও নেই। সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম—দুই বাঁহাতি স্পিনার—একাধিকবার এক ম্যাচে ১০ উইকেট নিলেও কেউই তিনবার এই নজির গড়তে পারেননি। ফলে এ দিক থেকে দেশের ইতিহাসে মিরাজ এখন এককভাবে এগিয়ে।
তবে তার এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সও দলের জয় নিশ্চিত করতে পারেনি। এক পর্যায়ে প্রায় জয়ের কাছাকাছি চলে যাওয়া ম্যাচে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত হেরে যায় তিন উইকেটে। দলের এমন হতাশাজনক পরিণতি হলেও, মিরাজের ব্যক্তিগত অর্জন এই ম্যাচে সবার চোখ কেড়েছে।
বোলারদের তালিকায় এই উন্নতি তাকে আবারও প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য বোলার হিসেবে। বিশেষ করে দেশের মাটিতে কিংবা স্পিন সহায়ক উইকেটে তিনি যে কতটা কার্যকর, তা বারবার উঠে এসেছে তার পরিসংখ্যানে।
মিরাজ ছাড়াও ব্যাটসম্যানদের তালিকায় কিছুটা উন্নতি এসেছে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মাঝে। সিলেটে প্রথম ইনিংসে ৫৬ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৭ রান করে মুমিনুল হক পাঁচ ধাপ এগিয়ে এখন আছেন ৪৮তম স্থানে। একই ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৮ রানের কার্যকর ইনিংস খেলে জাকির আলি ১০ ধাপ এগিয়ে উঠে এসেছেন ৫০ নম্বরে।
আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত প্রথম ইনিংসে ৪০ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬০ রান করে চার ধাপ এগিয়ে এখন ৫২তম স্থানে। আর তরুণ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় দুই ইনিংসে ১৪ ও ৩৩ রান করেও এগিয়েছেন পাঁচ ধাপ, বর্তমানে অবস্থান করছেন ৯৫ নম্বরে।
অন্যদিকে, বোলারদের শীর্ষে যথারীতি অবস্থান করছেন ভারতের গতিময় পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ। ব্যাটসম্যানদের র্যাংকিংয়েও বদলায়নি শীর্ষস্থান—ইংল্যান্ডের জো রুট এখনও রয়েছেন এক নম্বরে। টেস্ট অলরাউন্ডারদের র্যাংকিংয়েও শীর্ষে রয়েছেন ভারতের রাভিন্দ্র জাদেজা।
সবমিলিয়ে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের বিচারে কিছুটা উন্নতি করলেও দলগতভাবে হতাশাজনক সিলেট টেস্টের স্মৃতি নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। তবে মিরাজের এই দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন দলকে ভবিষ্যতের ম্যাচগুলোতে নতুন আশার আলো দেখাবে—এমনটাই মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ