
ছবি: সংগৃহীত
পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার জেরে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এই ঘটনার জেরে এবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। বুধবার রাতে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের সব বিমানের জন্য ভারতের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে পাকিস্তানভিত্তিক কিংবা পাকিস্তান সরকারের পরিচালিত কোনো বাণিজ্যিক কিংবা সামরিক বিমান আর ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না।
ভারত সরকারের জারি করা ‘নোটিস টু এয়ার মিশন’ (NOTAM) অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞা সামরিক বিমান ছাড়াও সব ধরনের বেসামরিক বিমানেও প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ, পাকিস্তান থেকে কোনো বিমান আর ভারতের উপর দিয়ে অন্য কোনো দেশে যেতে পারবে না। ভারতের এই পদক্ষেপের জবাবে আগেই পাকিস্তান ভারতের বিমান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। সেই সময় পাকিস্তান ঘোষণা করেছিল, ভারতের কোনো বিমান তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না। এবার ছয় দিন পর তারই পাল্টা উত্তর দিল ভারত।
উল্লেখ্য, ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিলের জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারায় অন্তত ২৬ জন। ভারত এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে। যদিও পাকিস্তান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছে। ভারত এরই মধ্যে কড়া অবস্থান গ্রহণ করে সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করেছে।
আকাশসীমা নিষেধাজ্ঞার ফলে পাকিস্তান এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ওশিয়ানিয়া কিংবা ইউরোপগামী রুটে বিমান পাঠাতে হলে বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হবে। এমন ক্ষেত্রে বিমানের যাত্রাপথ অনেক লম্বা হয়ে যাবে, যার ফলে জ্বালানি ব্যয় বাড়বে এবং যাত্রার সময়ও দীর্ঘ হবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ভাড়ার ওপরও—বাড়তে পারে টিকিটের দাম। একই ধরনের সমস্যায় ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোকেও পড়তে হয়েছে, কারণ পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহারে তারাও নিষেধাজ্ঞার মুখে।
সূত্র জানিয়েছে, ভারতের পক্ষ থেকে আকাশসীমা বন্ধের এই সিদ্ধান্ত মূলত সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবেই নেওয়া হয়েছে। কারণ ইসলামাবাদ আশঙ্কা করছে যে, পহেলগাঁওয়ে হামলার পাল্টা হিসেবে ভারত যে কোনো মুহূর্তে সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে। এ কারণে পাকিস্তান তাদের আকাশসীমায় নজরদারি জোরদার করেছে এবং ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে বিশেষভাবে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এমনকি পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে যাত্রীবাহী সব ধরনের বিমান চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মহলেও এই উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একাধিকবার ভারত ও পাকিস্তানকে সংযত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইতোমধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে পৃথকভাবে ফোনে কথা বলেছেন। তিনি দুই পক্ষকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কূটনৈতিকভাবে এগোনোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে এমন সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে, তখন ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের আরও অবনতি পরিস্থিতিকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।
এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে আকাশসীমা নিষেধাজ্ঞা কেবলমাত্র এক কূটনৈতিক পদক্ষেপই নয়, বরং দুই দেশের মধ্যকার দূরত্ব, অবিশ্বাস ও প্রতিক্রিয়াশীল কৌশলেরই আরেকটি চিহ্ন—যা উপমহাদেশের ভবিষ্যতের জন্য এক অশনি সংকেত হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ