
ছবি: সংগৃহীত
কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনা আন্তর্জাতিক মহলেও গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সংঘাত প্রশমন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করলো যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পৃথক ফোনালাপে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে কথা বলেন।
ভারতের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির বরাতে জানা যায়, মার্কো রুবিও তাঁর দুই গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথনে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন—পহেলগাঁওয়ে সংঘটিত হামলার জেরে যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় কূটনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত উত্তেজনা বেড়েছে, তা রোধে ভারত ও পাকিস্তানকে একযোগে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি জোর দেন সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যক্রমে আঞ্চলিক সমন্বয়ের ওপর এবং দুটি দেশকেই সংলাপ ও কূটনৈতিক উপায়ে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানান।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ফোনালাপে রুবিও পহেলগাঁও হামলায় প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং এই ‘অযৌক্তিক’ সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি ভারতের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রশ্নে মার্কিন প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি তিনি পাকিস্তানকেও এই ঘটনার তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদানের অনুরোধ জানান এবং জোর দেন যে, এমন ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যৌথভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কো রুবিওর এই কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ কোনো সাধারণ আনুষ্ঠানিক বার্তা নয়—বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের কৌশলগত অগ্রাধিকার প্রতিফলন করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতকে পরোক্ষভাবে সতর্ক করেন যেন তারা উত্তেজনার মধ্যে প্রতিশোধমূলক কোনো পদক্ষেপ না নেয়, কারণ সেটি দক্ষিণ এশিয়ায় বিস্তৃত পরিণতির জন্ম দিতে পারে।
ফোনালাপে তিনি ভারতকে আহ্বান জানান, তারা যেন শান্তিপূর্ণ এবং পরিণত কৌশলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে, সেইসঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে তথ্য ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করে। তার মতে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা কেবলমাত্র পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বাস্তবভিত্তিক কূটনীতির মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে আলাপকালে মার্কো রুবিও পাকিস্তান সরকারের কাছে হামলার তদন্তে গঠনমূলক ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। তিনি প্রত্যাশা করেন, পাকিস্তান এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসবাদবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করবে এবং তদন্তে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।
উল্লেখ্য, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ভয়াবহ হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন। নিহতদের বেশিরভাগই ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন। হামলার পরই দিল্লি সরাসরি ইঙ্গিত দেয় যে, সীমান্তপারের মদদ ছাড়া এ ধরনের সমন্বিত হামলা সম্ভব নয়। পাকিস্তান অবশ্য ঘটনার সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে এসেছে।
এই পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই কূটনৈতিক তৎপরতা বহু গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে এটি সাময়িক উত্তেজনা প্রশমন করতে সহায়তা করতে পারে, অন্যদিকে এটি দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টাও বটে। পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই চায় না ভারত ও পাকিস্তান যেন আবারও ২০১9 সালের মতো সীমান্ত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে।
সবশেষে মার্কো রুবিওর পক্ষ থেকে উভয় দেশকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, পরমাণু শক্তিধর এই প্রতিবেশী দেশগুলোর যেকোনো উত্তেজনাকর পদক্ষেপ গোটা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে পারে। তাই এ পরিস্থিতিতে শান্তির জন্য পারস্পরিক আস্থা ও পরিপক্ব কূটনীতিই হতে পারে একমাত্র কার্যকর সমাধান।
বাংলাবার্তা/এমএইচ