
ছবি: সংগৃহীত
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের জাতীয় দলের নেতৃত্ব নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিল পরিস্থিতি। সদ্য বিদায়ী অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত নিজেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ফলে নতুন অধিনায়ক খুঁজে বের করাই এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সবচেয়ে সম্ভাব্য নাম হিসেবে উঠে এলেও উইকেটকিপার-ব্যাটার লিটন দাসের চোট এই সিদ্ধান্তে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিসিবি insiders বলছেন, লিটনের উপরই বোর্ডের আস্থা ছিল সবচেয়ে বেশি। তার অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রভাব বিবেচনায় তাকে সামনের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বিবেচনা করা হচ্ছিল। তবে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)-এ খেলার সময় একটি অনুশীলনে হাতে চোট পাওয়ার কারণে আপাতত তার ফিটনেস নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিসিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, লিটনের হাতে প্রাথমিকভাবে হালকা চোট ধরা পড়েছে। তবে প্রকৃত অবস্থা নির্ধারণের জন্য শনিবার (৩ মে) এক্স-রে করানো হবে। সেই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে তিনি আসন্ন সিরিজগুলোতে নেতৃত্ব দিতে পারবেন কি না।
আগামী ১৭ ও ১৯ মে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে শারজাহতে দুটি টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ। এরপর ২৫ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত পাকিস্তানের মাটিতে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে অংশ নেবে টাইগাররা। বিসিবি চাচ্ছে দুটি সিরিজেই একসঙ্গে একই স্কোয়াড এবং একজন স্থায়ী অধিনায়ক মাঠে নামাতে। কিন্তু লিটনের চোট নির্ভর করে আছে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
বোর্ডের পরিকল্পনায় দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে রয়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। তবে তার ক্ষেত্রেও একই সমস্যা—চোট। অ্যাকিলিস ইনজুরিতে ভুগছেন তাসকিন, এবং এই মুহূর্তে তিনি ইংল্যান্ডে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিচ্ছেন। বিসিবি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে অন্তত দুটি সিরিজে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখা হবে যেন তিনি বিশ্বকাপের আগে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
টি-টোয়েন্টি দলের নিয়মিত অধিনায়ক ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে চলতি বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর তিনি বোর্ডের সঙ্গে আলোচনায় জানান, তিনি আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী নন। বিসিবিও শান্তর কথা গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেছে এবং তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় তাকে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই দেখছে।
এর আগে ক্যারিবিয়ান সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে শান্ত না থাকায় অন্তর্বর্তীকালীন অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান লিটন দাস। সে সিরিজে তার অধিনায়কত্বে দলের পারফরম্যান্স ভালো না হলেও বোর্ড লিটনের ম্যাচ রিডিং ও অন-ফিল্ড কমিউনিকেশন নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল।
বিসিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “লিটনের উপর আমরা আস্থা রাখছি। তবে কোনো চোট থাকলে সেটা দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিতে না গিয়ে সঠিক চিকিৎসা দিতে হবে। আমরা আশা করছি, এক্স-রেতে বড় কিছু ধরা পড়বে না। তবে রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না।”
সেই কর্মকর্তা আরও বলেন, “আমিরাত ও পাকিস্তান সিরিজের জন্য সময় হাতে খুব বেশি নেই। আমাদের অন্তত ১০ মে’র মধ্যে দল ঘোষণা করতে হবে। তাই লিটনের ফিটনেস রিপোর্ট আমাদের সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে।”
ক্রিকেট অঙ্গনে আলোচনা চলছে, লিটন ও তাসকিন না পারলে কি বোর্ড নতুন কারও দিকে তাকাবে? এমন পরিস্থিতিতে সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ কিংবা অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের মতো খেলোয়াড়দের নাম উঠে আসলেও, বোর্ড এই তিনজনকেই আপাতত নেতৃত্বের পরিকল্পনার বাইরে রেখেছে।
বিশেষ করে সাকিব এখনো ইনজুরির পুনর্বাসনে আছেন এবং টি-টোয়েন্টিতে ফেরার সম্ভাবনা কম। মুশফিক এ ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছেন। মিরাজের নেতৃত্ব দক্ষতা আছে, কিন্তু নিয়মিত পারফরম্যান্স ও টি-টোয়েন্টিতে তার ভূমিকা এখনও পর্যাপ্ত নয় বলেই মনে করছে বোর্ড।
সব মিলিয়ে, বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব এখন এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। পূর্বনির্ধারিত সিরিজগুলোকে সামনে রেখে একটি স্থায়ী অধিনায়ক ঠিক করতে না পারায় প্রস্তুতির ছন্দ হারানোর আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। লিটন দাসের এক্স-রে রিপোর্ট এবং তাসকিনের পুনর্বাসন অগ্রগতি—এই দুইয়ের ওপরই এখন পুরো পরিকল্পনা ঝুলে আছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ