
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক অধস্তন আদালতের বিচারকদের প্রেষণ, বদলি ও পদায়নের জন্য নতুন নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা দেশের বিচার ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। নতুন এই নীতিমালা বিচারকদের বদলি ও পদায়ন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ এবং নির্দিষ্ট শর্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ করবে। এর মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত প্রভাব হ্রাস এবং বিচার বিভাগের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
বর্তমানে দেশে বিচারকদের পদায়ন এবং বদলি বিষয়ক যে ধরনের অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এক বিচারক দীর্ঘ সময় একই কর্মস্থলে নিযুক্ত থাকেন। এর ফলে বিভিন্ন সমস্যা যেমন, স্থানীয় প্রভাবের বিস্তার, পক্ষপাতিত্ব এবং আদালতের সুনামহানি ঘটে। নতুন নীতিমালার আওতায়, এখন থেকে কোনো বিচারক এক কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি থাকতে পারবেন না। সেই সঙ্গে বিচারক বা তার পরিবারের সদস্য যদি কোনো জেলায় ৩০ শতাংশ কৃষি জমি বা ১০ শতাংশ অকৃষি জমির মালিক হন, তবে সেখানে তাঁকে পদায়ন করা যাবে না।
এই নতুন নিয়মের উদ্দেশ্য, বিচারকদের নিয়োগ ও বদলি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে বিচারকদের পদায়ন এবং বদলি হবে যথাযথ এবং নির্দিষ্ট নিয়মের আওতায়। এর মাধ্যমে বিচারকদের উপযুক্ত এবং নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ তৈরি হবে। এর আগে, বেশ কিছু বিচারের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল যে, এক বিচারক বিভিন্ন জেলায় বারবার বদলি হয়ে গেছেন, যা বিচার ব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি করেছিল।
নতুন নীতিমালার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, যদি কোনো বিচারক জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হয়ে থাকেন, তবে তাঁকে পরবর্তী পাঁচ বছর সেই জেলায় বদলি করা যাবে না। এছাড়া, চৌকি আদালতের বিচারকের জন্য নির্ধারিত মেয়াদও থাকবে সর্বোচ্চ দুই বছর। এই নিয়মের ফলে বিচারকদের কর্মস্থলে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং তাদের অভিজ্ঞতা বাড়বে, যা সুষ্ঠু বিচার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে।
এছাড়া, যেকোনো শূন্য পদ ছাড়া বিচারককে বদলি করা যাবে না এবং এক কর্মস্থলে পরপর দুইবার বদলি করার সুযোগও থাকবে না। বিচারকের স্থায়ী পদায়ন বা বদলি নিয়ে কোনো জেলায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা আইন পেশায় নিয়োজিত থাকলে, সেখানে তাকে বদলি করা হবে না।
এসব বিধান প্রতিস্থাপন করা হলে, বিচার বিভাগের ভিতরে আরো শক্তিশালী এবং সুশৃঙ্খল একটি কাঠামো তৈরি হবে, যা নাগরিকদের জন্য সুবিচার নিশ্চিত করবে। সুপ্রিম কোর্ট এই নীতিমালার কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে, এবং এর পরবর্তী কার্যক্রম অতি শীঘ্রই শুরু হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ