
ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বিএনপি। বুধবার দুপুরে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের কাছে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই।’ প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে নির্বাচনের নির্দিষ্ট কোনো সময় বা তারিখ না পাওয়াই এই অসন্তুষ্টির মূল কারণ বলে জানায় বিএনপি।
বিএনপি এই বৈঠকে নির্বাচন ঘিরে চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ঘনীভূত জনঅসন্তোষের প্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে একটি নির্ধারিত সময়সীমা প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বৈঠকে জানান, তিনি ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬–এর মধ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চান। বিষয়টি বিএনপির কাছে অস্পষ্ট ও অনির্দিষ্ট মনে হওয়ায় তারা আলোচনায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ আমাদের দেননি। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, আমাদের সময়সীমা ডিসেম্বর। ডিসেম্বরের পর নির্বাচন হলে দেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।”
তিনি আরও জানান, “এটা এমন না যে তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বললেন ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে না। কিন্তু তিনি জুন পর্যন্ত সময় নিয়ে নিয়েছেন। আমরা এটাও পরিষ্কারভাবে বলেছি, ‘আওয়ার কাট-অফ টাইম ইজ ডিসেম্বর’। তার মানে, জুন পর্যন্ত সময় নেওয়া হলে সেটা আমাদের গ্রহণযোগ্য নয়।”
এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কোনো দীর্ঘসূত্রতা চায় না। তারা চাইছে খুব নির্দিষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট একটি রোডম্যাপ। এ বিষয়ে দলের অবস্থান এখনো দৃঢ় রয়েছে। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে তারা মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানানো হয়েছে।
এই বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিও পুনর্ব্যক্ত করা হয় বলে জানা গেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা আগেও বলেছি, এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই আমরা নিরপেক্ষ সরকার চাই এবং সেটার ভিত্তিতে একটি নির্ধারিত নির্বাচনী সময়সূচি চাই।”
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈঠকের পর বিএনপির এমন অসন্তুষ্ট প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে যে রাজনৈতিক উত্তেজনা আবারও তীব্র হতে পারে। বিশেষ করে যদি সরকারপক্ষ বা প্রধান উপদেষ্টা পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময়সীমা আরও পেছানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠবে।
উল্লেখ্য, আগেরবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি জানিয়েছিল, তারা কিছুটা ‘আশ্বস্ত’ হয়েছে। কিন্তু এবার একই ধরণের বৈঠকের পর তাদের কণ্ঠে রয়েছে স্পষ্ট হতাশা ও অসন্তোষ। সাংবাদিকরা বিষয়টি জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, “একই প্রশ্ন অন্যভাবে নিচ্ছেন কেন? অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে এটাই ছিল মুখ্য—নির্বাচনের বিষয়।”
এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে বিএনপি এখন সময়ক্ষেপণের কোনো কৌশলকে আর সহনীয় বলে মনে করছে না। দলটি তাদের অবস্থানে অনড় এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের নির্ধারিত সময় চায়। এখন দেখার বিষয়, প্রধান উপদেষ্টা এবং সরকার পক্ষ থেকে বিএনপির এই শক্ত অবস্থানের কী ধরনের প্রতিক্রিয়া আসে, এবং সেটি আগামী দিনে রাজনৈতিক চিত্র কোনদিকে মোড় নেয়।