
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম আগামী সপ্তাহে টানা দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। প্রথম ধাপে তিনি ২২ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় অবস্থান করবেন। এরপর চার দিনের জন্য চীন সফরে যাবেন তিনি। এই সফরে নাহিদ ইসলাম আট সদস্যের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন বলে জানা গেছে।
চীন সফর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) ঢাকায় বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসে এনসিপির প্রতিনিধিদলের জন্য এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সংবর্ধনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এনসিপি প্রতিনিধিদলের সফরের সাফল্য কামনা করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এ সফর দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা আরও জোরদার করবে। পরে ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাস তাদের সরকারি ফেসবুক পেজেও এ সংবর্ধনার তথ্য প্রকাশ করে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত এনসিপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলেন, আসন্ন সফর বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় উন্নীত করার একটি সুযোগ তৈরি করবে। তারা বিশ্বাস করেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক ইস্যুতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এ সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নাহিদ ইসলাম এ সময় বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আগামী দিনে আরও গভীর হবে। রাজনৈতিক দলীয় পর্যায়ে এ ধরনের সফর শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং জনগণের স্বার্থে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের হাতিয়ার হতে পারে।”
চীন সফরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের নেতাদের অংশগ্রহণ সাম্প্রতিক সময়ে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। এর আগে গত ১১ থেকে ১৫ জুলাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল চীন সফর করে। এরও আগে জুন মাসে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বেইজিং সফর করে।
এই ধারাবাহিকতা থেকেই স্পষ্ট, চীন বাংলাদেশের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ফলে এনসিপি’র আসন্ন সফরও কূটনৈতিকভাবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
নাহিদ ইসলাম মালয়েশিয়া সফরে দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে দলের সূত্রে জানা গেছে। প্রবাসীদের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতার রূপরেখা তৈরি করার বিষয়টিকেও এ সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক গত কয়েক দশকে বহুমাত্রিক রূপ নিয়েছে। বাণিজ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, জ্বালানি, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলীয় পর্যায়ে সফর বিনিময়ও দুই দেশের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
কূটনৈতিক মহলের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখছে, তা ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূরাজনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চীনের এ আগ্রহকে অনেকেই কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
সব মিলিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের টানা দুটি বিদেশ সফর কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিক সফর নয়, বরং কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং চীনে রাজনৈতিক পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন—দুটিই বাংলাদেশকে নতুন সুযোগ এনে দিতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এনসিপি নেতারা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ