
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ ঈদের ছুটি শেষে প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দঘন সময় কাটিয়ে ধীরে ধীরে রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষ। ঈদের উৎসবের রেশ যেন এখনও কারও চোখে-মুখে, কিন্তু বাস্তব জীবনের তাগিদেই সবাইকে ফিরতে হচ্ছে কর্মস্থলে। এবারের ঈদ ছিল দীর্ঘ ১০ দিনের ছুটিতে ভরপুর, যা মানুষের যাওয়া ও ফেরাকে করেছে আগের তুলনায় অনেক বেশি স্বস্তিকর এবং ঝামেলাহীন।
১২ জুন বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথ, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন এবং বিমানবন্দর এলাকায় ছিল ঘরমুখো মানুষের বিপরীত চিত্র—ঢাকামুখী মানুষের ভিড়। যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ, কমলাপুর রেলস্টেশন ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করে সকাল থেকেই।
দেখা গেছে, কেউ ফিরছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউবা একা। সবার চোখেমুখে ঈদের আনন্দ আর তৃপ্তির ছাপ স্পষ্ট। শহরে ফেরার মাঝেও তারা মনের ভেতরে বয়ে নিয়ে আসছেন ঈদের স্মৃতিময় মুহূর্ত। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের ঈদযাত্রা ছিল স্বস্তিকর এবং নির্বিঘ্ন। রাস্তায় ছিল না দীর্ঘ যানজট, ট্রেনের টিকিট নিয়ে ছিল না কালোবাজারির বিড়ম্বনা, আর লঞ্চ ও বাস চলাচল ছিল মোটামুটি সময়মতো।
সাতক্ষীরা, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় ফিরেছেন অসংখ্য মানুষ। যাত্রীদের অনেকে জানান, যানবাহন সময়মতো পেয়েছেন, ভাড়া ছিল সহনীয় এবং যাত্রাপথে কোনো বড় ধরনের সমস্যা হয়নি। বরং দীর্ঘদিন পর একটি “মসৃণ ঈদ” কাটাতে পেরে তারা স্বস্তি প্রকাশ করেন।
একজন যাত্রী বলেন, “বছরের অন্য ঈদগুলোতে ফেরার সময় বাসে বা ট্রেনে চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো, কিন্তু এবার একেবারে বিপরীত। সময়মতো গাড়ি পেয়েছি, ট্রেনেও চড়েছি নির্বিঘ্নে। এমন ঈদযাত্রা আগে কখনও হয়নি।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঈদ শেষে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে ফেরার জন্য তারা বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। বিভিন্ন হাইওয়ে ও প্রবেশপথে ছিল অতিরিক্ত পুলিশি তৎপরতা, যাতে যানজট তৈরি না হয় এবং গাড়িগুলো সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে।
বাস মালিক সমিতির কর্মকর্তারাও জানান, এবার আগেভাগেই সড়কের সংস্কার এবং যানবাহনের প্রস্তুতি নেওয়ায় যাত্রীদের যাত্রা সহজ হয়েছে। পাশাপাশি লোকাল রুটের যাত্রীদের জন্যও বাড়তি বাসের ব্যবস্থা রাখা হয়, ফলে চাপ সামাল দিতে সহজ হয়েছে।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, একটানা যাত্রীর ভিড় থাকলেও ছিল না বিশৃঙ্খলা বা হুড়োহুড়ি। ট্রাফিক পুলিশ ও বাস কাউন্টার কর্মীদের সমন্বয়ে যাত্রী উঠা-নামার প্রক্রিয়া ছিল সুসংগঠিত। অনেকেই জানান, তারা কয়েক বছর পর এই প্রথম ঈদের পর এত সহজে ও শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকায় ফিরতে পারছেন।
একজন যাত্রী, যিনি কুমিল্লা থেকে ফিরছিলেন, বললেন, “আগে ঈদের পরে ঢাকায় ফিরতে ৮-১০ ঘণ্টা লেগে যেত। এবার মাত্র ৪ ঘণ্টায় পৌঁছেছি। কোনো যানজট নেই, গরমও সহনীয় ছিল। খুবই আরামদায়ক ভ্রমণ হয়েছে।”
ঈদের ছুটি উপলক্ষে যারা ঢাকায় আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদ করতে এসেছিলেন, তারাও ছুটি শেষে আবার নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরছেন। অনেকে ফিরছেন নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, এমনকি চট্টগ্রাম বা রাজশাহী অঞ্চলের শিল্পাঞ্চলে। তারা জানান, ঈদের ছুটি কাজে লাগিয়ে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পেরে মানসিকভাবে বেশ চাঙ্গা বোধ করছেন।
বছরব্যাপী কর্মব্যস্ত জীবনে যারা নিয়ম করে ছুটি পান না, তারা এবারের টানা ঈদ ছুটিকে একপ্রকার পরম আশীর্বাদ হিসেবেই দেখছেন। টানা ১০ দিনের ছুটির কারণে মানুষজন ধাপে ধাপে বাড়ি গিয়েছেন, ধাপে ধাপে ফিরছেনও। ফলে কোথাও হঠাৎ চাপ পড়েনি, যা যানজট, যাত্রী সংকট ও পরিষেবার চাপ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে।
একজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, “আগে সবসময় যাওয়া-ফেরার সময় মারাত্মক ভিড় আর কষ্ট হতো। এবারে দীর্ঘ ছুটির কারণে সবার যাত্রা ছড়িয়ে গেছে। তাই অনায়াসে যাওয়া-আসা করতে পেরেছি।”
একটি স্বস্তির ঈদ কাটিয়ে কর্মজীবীরা এখন আবার ফিরছেন ব্যস্ত রাজধানী ঢাকায়। কেউ ফিরছেন কারখানায়, কেউ অফিসে, আবার কেউবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। চোখেমুখে ঈদের খুশির আভা থাকলেও হৃদয়ে চলছে নতুন কর্ম-উৎসবের প্রস্তুতি।
ঈদের আনন্দের রেশে উজ্জীবিত এই কর্মফেরত মানুষেরাই আবার প্রাণ ফেরাবেন ঢাকার কর্মজীবনে। একটানা ছুটির পর নতুন উদ্যমে তারা নেমে পড়বেন কাজের মাঠে—যেখানে আগামী ঈদের অপেক্ষা আরেকটা লক্ষ্য হয়ে ধরা দেবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ