
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় রবিবার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মুখোমুখি হলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। ১৩ বছর পর বাংলাদেশ সফরে এসে এমন একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছে।
বৈঠকের শুরুতেই ইসহাক দার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শেহবাজ শরিফের আন্তরিক শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন। জবাবে ড. ইউনূসও উষ্ণ শুভেচ্ছা জানিয়ে অতীতে শরিফের সঙ্গে বৈঠকের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “আমরা সবসময় সার্ক নিয়ে আলোচনা করেছি। আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।”
আলোচনায় দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। ইসহাক দার বলেন, “বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অর্থনীতি পরিপূরক। কৃষি, শিল্প, টেক্সটাইল, তথ্যপ্রযুক্তি—অসংখ্য খাতে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।” একইসঙ্গে দারিদ্র্য বিমোচন ও জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে অধ্যাপক ইউনূসের অবদানকে তিনি অনুপ্রেরণাদায়ক বলে উল্লেখ করেন।
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা বাণিজ্যিক সম্পর্ককে কেবল লেনদেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না, বরং আঞ্চলিক উন্নয়ন ও পারস্পরিক সমৃদ্ধির অংশ হিসেবে দেখতে চাই।”
বৈঠকে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে সার্ককে কেন্দ্র করে দীর্ঘ আলোচনা হয়। ইউনূস বলেন, “আমি সার্ককে উৎসাহিত করি এবং পাকিস্তানসহ সব সদস্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেই।” দারও সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান জানান।
ড. ইউনূস সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “যখন পাকিস্তানি শিল্পীরা বাংলাদেশে গান পরিবেশন করেন, সেগুলো সবাই উপভোগ করেন। সংস্কৃতির শক্তিই আমাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।”
বৈঠকে ইসহাক দার জানান, দুই দেশের মধ্যে নৌ ও বিমান যোগাযোগ উন্নয়নের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, “অক্টোবরে ফ্লাই জিন্নাহ ঢাকা-করাচি সরাসরি ফ্লাইট চালু করবে। পাশাপাশি পিআইএ বেসরকারিকরণের পর ঢাকায় ফ্লাইট চালুরও পরিকল্পনা রয়েছে।”
বৈঠকের শেষে উভয় নেতা আশা প্রকাশ করেন যে, বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সার্কভিত্তিক সহযোগিতা দক্ষিণ এশিয়াকে আরও স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণত করবে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচও