
ছবি: সংগৃহীত
রোহিঙ্গা সংকট এখন অষ্টম বছরে পা দিলেও কার্যকর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। কক্সবাজারে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আটকে আছেন, যাদের বাংলাদেশ মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এই অস্থায়ী সমাধান এখন ভয়াবহ মানবিক ও নিরাপত্তাজনিত সংকটে রূপ নিয়েছে।
এই বাস্তবতায় তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে কক্সবাজারে। শিরোনাম—“টেক অ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন।” ৪০টি দেশের প্রতিনিধি, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা এতে অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে—রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কৌশল নির্ধারণ।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে একাই এই বোঝা বহন করছে। কিন্তু এই সংকটের সমাধান আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া সম্ভব নয়।”
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শিগগিরই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ এককভাবে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে পারবে না। সম্মেলনের সুপারিশগুলো আগামী সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে।”
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি টমাস অ্যান্ড্রুজ সম্মেলনে বলেন, “মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মি পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করছে। যদি বিশ্বশক্তি—যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জাতিসংঘ—একযোগে চাপ সৃষ্টি না করে, তবে কোনো প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।”
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনার রউফ মাজু জানান, গাজার মতোই রোহিঙ্গা শিবিরগুলোও এখন মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। “খাদ্য ও শিক্ষা—উভয়ের সংকট বাড়ছে। দীর্ঘমেয়াদে এই পরিস্থিতি অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে।”
বিজিবির কড়া নজরদারিতে নতুন রোহিঙ্গাদের প্রবেশ কিছুটা থামানো গেলেও মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন করে সংঘাত পরিস্থিতি জটিল করেছে। টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, “কিছু লোক সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। আমরা কাউকে ঢুকতে দিচ্ছি না। দালালরা সুযোগ নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হক মনে করেন, “রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য আঞ্চলিক কূটনীতি জোরদার করতে হবে। শুধু জাতিসংঘ নয়, আসিয়ানকেও সক্রিয় করতে হবে।”
অন্যদিকে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বলেন, “রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন বাংলাদেশে রেখে দিলে এটি দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই এখনই রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে।”
সব মিলিয়ে, কক্সবাজারে চলমান সম্মেলনকে সরকার একটি “পূর্বপ্রস্তুতি মহড়া” হিসেবে দেখছে, যার ফলাফল যাবে নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে। তবে বাস্তবে রোহিঙ্গারা কবে নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারবেন, সেটি এখনো অনিশ্চিত।
বাংলাবার্তা/এমএইচও