
ছবি: সংগৃহীত
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফের ধরা পড়ল আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের কৌশল। পাঞ্জাবির পকেটে লুকিয়ে আনা হচ্ছিল প্রায় এক কেজি স্বর্ণালঙ্কার। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুরে বিমানবন্দরের আগমনী টার্মিনাল এলাকা থেকে ৮৯৬ গ্রাম স্বর্ণসহ দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। উদ্ধারকৃত স্বর্ণালঙ্কারের বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি টাকা বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার বিষয়ে এপিবিএনের কর্মকর্তারা জানান, ওই দিন দুপুরে বিমানবন্দরের আগমনী টার্মিনালে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিল দুই ব্যক্তি। তাদের গতিবিধি নজরে এলে তাৎক্ষণিকভাবে এপিবিএনের সদস্যরা তাদের আটক করেন। প্রাথমিকভাবে কিছু না পাওয়ায় তাদের দেহ তল্লাশি করা হয়। পরে তাদের পরিহিত পাঞ্জাবির পকেটে লুকানো অবস্থায় উদ্ধার হয় সোনার তৈরি বিভিন্ন অলঙ্কার—যার মোট ওজন দাঁড়ায় ৮৯৬ গ্রাম।
একজন কর্মকর্তার ভাষায়, “তাদের আচরণ ছিল অস্বাভাবিক। জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রথমে কিছু বলতে চায়নি। কিন্তু কড়াভাবে জেরা করার পর একপর্যায়ে তারা পাঞ্জাবির পকেটে গয়না লুকিয়ে আনার বিষয়টি স্বীকার করে।”
আটক দুই ব্যক্তি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের হয়ে কাজ করছেন। তাদের কাজ ছিল মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে সোনা সংগ্রহ করে তা বিমানে করে বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়া। তারপর বিমানবন্দরে বিশেষ কৌশলে গোপনে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা।
এপিবিএনের কর্মকর্তারা বলেন, আটক দুইজন মূলত “ক্যারিয়ার” হিসেবে কাজ করতেন। এর আগেও তারা একাধিকবার এভাবে সোনা নিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে এই প্রথমবার ধরা পড়লেন তারা।
এপিবিএনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চোরাচালান প্রতিরোধে আমরা সবসময়ই তৎপর। সাম্প্রতিক সময়ে স্বর্ণ চোরাচালানকারীরা নানা নতুন কৌশল ব্যবহার করছে। তবে আমরা আমাদের নজরদারি বাড়িয়েছি। বিভিন্ন প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করে প্রতিদিনই আমরা চোরাকারবারিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছি।”
তিনি আরও বলেন, “চোরাকারবারিরা এখন আর শুধু লাগেজ বা সুটকেসে স্বর্ণ বহন করে না। তারা শরীরের বিভিন্ন অংশে, এমনকি কাপড়ের সেলাইয়ের ভেতরেও সোনা লুকিয়ে আনছে। তবে এসব চক্রকে আমরা ছাড় দিচ্ছি না।”
আটক দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্ত করছে এপিবিএনের বিশেষ দল। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই দুইজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চোরাচালান সিন্ডিকেটের মূল হোতাদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
এপিবিএনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা যথেষ্ট নয়, চোরাচালান বন্ধে সাধারণ জনগণেরও সচেতনতা জরুরি। বিমানবন্দরে কেউ যদি সন্দেহজনক কোনো কিছু দেখতে পান, তাহলে সাথে সাথেই কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একাধিকবার একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবারই চোরাকারবারিরা অভিনব কৌশলে স্বর্ণ দেশে আনার চেষ্টা করেছে। তবে এপিবিএনের তৎপরতায় তা ব্যর্থ হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দেশের অর্থনীতির ওপর এসব চোরাচালানের বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে, কর ফাঁকি দিয়ে আনা সোনার কারণে বৈধ পথে সোনা আমদানির হার কমে যায়, যা সোনা ব্যবসা ও দেশের রাজস্ব উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
সর্বশেষ এই অভিযানে আবারও প্রমাণিত হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথভাবে তৎপর থাকলে চোরাচালান রোধ করা সম্ভব। এখন প্রয়োজন বড় চক্রগুলোকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা।
বাংলাবার্তা/এসজে