
ছবি: সংগৃহীত
উপমহাদেশের দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা নতুন এক মাত্রায় পৌঁছেছে। একাধিক সীমান্তীয় হামলা, পাল্টা অভিযানে এখন যুদ্ধাবস্থা প্রায় বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের সাম্প্রতিক হামলার জবাবে শনিবার ভোরে পাকিস্তান “অপারেশন বুনয়া নুম মারসূস” নামে এক বিশাল সামরিক অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যম। এই অভিযানের আওতায় ভারতের কৌশলগত অবস্থানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, যার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য হামলা ছিল ভারতীয় ব্রাহ্ম ক্ষেপণাস্ত্রের গুদামে—যেটি ধ্বংস করার দাবি করেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানি নিরাপত্তা সূত্র বলছে, ভারতের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অবকাঠামোকে টার্গেট করা হচ্ছে এবং এর মধ্যে রয়েছে বিমান ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণ কেন্দ্র এবং সামরিক কমান্ড সেন্টার। অভিযানটি এমন সময়ে শুরু হলো যখন কিছুদিন আগেই ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়—নূর খান এয়ার বেজ, মুরিদ বেস এবং শুরকোট এয়ার বেজ। এসব হামলা ছিল বিমান থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইলের মাধ্যমে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ও আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমদ শরিফ চৌধুরী এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ভারত আমাদের পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য করেছে। পাকিস্তান এবার আর নীরব থাকবে না। আমরা আমাদের ভূখণ্ড, জনগণ এবং সম্মানের সুরক্ষায় যথাযথ ও কড়া জবাব দেব।”
তিনি আরও জানান, “ভারতীয় হামলার পরও আমাদের বিমান ঘাঁটিগুলো সম্পূর্ণ সুরক্ষিত এবং সক্রিয় রয়েছে। আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, তবে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।”
এই উত্তেজনার পটভূমিতে পাকিস্তান আবারও তাদের পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় করার ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার রাশিদ ওয়ালি শুক্রবার আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ভারতের মতো একটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র এতটা বেপরোয়া আচরণ করছে দেখে আমরা বিস্মিত। এর ফলাফল অত্যন্ত গুরুতর হতে পারে।” তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইসলামাবাদ তার জবাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও নির্ভুল সামরিক লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করবে।”
পাকিস্তান এখন কেবল প্রতিরোধে নয়, আক্রমণাত্মক কৌশলে চলে গেছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। সারা দেশজুড়ে উচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনী ভারতীয় আরও ছয়টি ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে। সামা টিভির বরাতে জানা গেছে, এ পর্যন্ত পাকিস্তান মোট ৭৭টি ভারতীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি প্রযুক্তিতে নির্মিত ২৫টি ড্রোন।
এদিকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ভারতে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়েও নানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, গত মঙ্গলবার রাতে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে তারা। যদিও ভারত এখনো এ দাবির সত্যতা স্বীকার কিংবা অস্বীকার করেনি। এই অস্বচ্ছ অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন মহলে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তবে বিবিসি ও নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে ভারতের কয়েকটি যুদ্ধবিমান, বিশেষত রাফাল, বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা নিশ্চিত করা হয়েছে। এসব ঘটনাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এক ভয়াবহ সংকেত হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এই সঙ্ঘাতই সবচেয়ে বড় সামরিক উত্তেজনা। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ ও কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তেজনা দীর্ঘদিনের হলেও এবার ব্যাপক আকারে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে সংঘর্ষের ধরন পাল্টে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে ভারতীয় বাহিনীর অভিযানে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগের জন্ম দেয়। পাকিস্তান সেই ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব দিলেও, উল্টো তার বিরুদ্ধেই ‘ভুয়া অভিযোগ’ তোলা হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটি। ব্রিগেডিয়ার রাশিদ ওয়ালি বলেন, “ভারত একদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক তদন্ত থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।”
পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থান স্পষ্টতই তাদের প্রতিরক্ষা নীতির নতুন মোড়কে ইঙ্গিত দিচ্ছে। যেখানে কূটনৈতিক চাপ এবং সামরিক উত্তেজনার মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা আর কেবল সম্ভাবনা নয়, বরং এক ধরনের বার্তাবাহক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিশ্ব রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে এই সঙ্ঘাত পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ কিংবা সীমিত পারমাণবিক লড়াইয়েও পরিণত হতে পারে—যার পরিণতি হবে ভয়াবহ এবং বহুদূরপ্রসারী। জাতিসংঘ ও বৃহৎ শক্তিগুলোকে দ্রুত মধ্যস্থতা করে দুই দেশকে শান্তি আলোচনায় বসানোর আহ্বান জানাচ্ছে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক মহল।
এই মুহূর্তে পাকিস্তান ও ভারত—উভয় দেশেই সর্বোচ্চ পর্যায়ের সতর্কতা জারি রয়েছে, এবং দুই দেশের জনমনে অস্থিরতা বাড়ছে। উপমহাদেশে শান্তি রক্ষায় এখন প্রয়োজন বিচক্ষণতা, সংলাপ, ও আন্তর্জাতিক দায়িত্বশীলতা। অন্যথায়, ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ সামরিক সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে এই উত্তেজনা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ