
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা আগের মাসগুলোর তুলনায় বেড়েছে কয়েক গুণ। একদিনেই সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর আসছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ জন রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। একই সময়ে ৫৫৬ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডেঙ্গুর কারণে মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে কয়েকজন রোগী মারা যাচ্ছেন। চলতি সেপ্টেম্বরেই বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে একদিনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন। তবে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতেও ডেঙ্গু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতেও নতুন রোগী ভর্তি হওয়ার হার বাড়ছে। অনেক জেলা হাসপাতালেই ডেঙ্গুর বিশেষ ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু চিকিৎসক ও শয্যার সংকটে সেসব যথেষ্ট হচ্ছে না।
ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ায় রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চরম চাপ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে শিশু, কিশোর এবং তরুণদের আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ঢাকার বৃহৎ হাসপাতালগুলোতে আলাদা ওয়ার্ড খুলতে হচ্ছে, কিন্তু শয্যার ঘাটতির কারণে অনেক রোগী করিডোরে, এমনকি মেঝেতে থেকেও চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর সাধারণ উপসর্গ হলো হঠাৎ উচ্চ জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, চোখের চারপাশে ব্যথা, শরীর ব্যথা, চর্মরোগ বা লালচে দাগ। গুরুতর অবস্থায় রোগীর রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে, প্লেটলেট কমে যেতে পারে এবং শকের ঝুঁকি তৈরি হয়। এই অবস্থায় রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি না করলে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকে সাধারণ জ্বর ভেবে বাসায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে ঝুঁকিতে পড়ছেন। দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণে মৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে শুধু হাসপাতালের প্রস্তুতি নয়, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং মশা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগই প্রধান সমাধান। ঢাকা ও অন্যান্য শহরে জমে থাকা পানি, নর্দমা, খোলা ড্রেন এবং নির্মাণাধীন ভবনে জমা পানিই এডিস মশার প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র।
তাদের মতে, জনগণকে ঘরে ও আশপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করতে হবে, যাতে এডিস মশার ডিম ফুটতে না পারে। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি।
চলতি বছরে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, প্রতিদিন গড়ে কয়েকশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ শিশু ও কিশোর বয়সী। মৃত্যুর সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় বাড়ছে বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।
ডেঙ্গুতে নতুন করে ৩ জনের মৃত্যু এবং ৫৫৬ জন রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর আবারও দেখিয়ে দিয়েছে, পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। হাসপাতালের শয্যা সংকট, চিকিৎসক ও জনবল ঘাটতি, পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে দুর্বলতা—সব মিলিয়ে সামনে আরও বড় ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই যদি সমন্বিত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে সেপ্টেম্বরের এই ভয়ংকর পরিস্থিতি আগামী মাসগুলোতে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ