
ছবি: সংগৃহীত
মিশরের পর্যটন শহর শারম আল–শেখে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আলোচনার দ্বিতীয় দিন সম্পন্ন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় এই আলোচনা চলছে, যেখানে গাজার পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় হামাস স্পষ্টভাবে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক নিশ্চয়তা দাবি করেছে। তারা বলেছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হলে ইসরাইলি বাহিনীর প্রত্যাহার এবং জিম্মিদের মুক্তির বিষয়গুলো একে অপরের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত হতে হবে।
আলোচনার বিষয়ে আল জাজিরাকে এক সাক্ষাৎকারে হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহারের সুনির্দিষ্ট মানচিত্র এবং ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির সময়সূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
তিনি জানান, হামাসের প্রতিনিধি দল এই দাবি জানিয়েছে যে, ইসরাইলি বাহিনীর প্রত্যাহার প্রতিটি ধাপের সঙ্গে যেন জিম্মিদের মুক্তির ধাপগুলো সরাসরি সম্পর্কিত থাকে। অর্থাৎ, যতটুকু সেনা প্রত্যাহার, ততটুকু জিম্মি মুক্তি—এই বিনিময় পদ্ধতিতে চূড়ান্ত চুক্তির পথ তৈরি হবে।
হামাস আরও বলেছে, গাজা থেকে শেষ ইসরাইলি বন্দির মুক্তির সময়ই হতে হবে দখলদার বাহিনীর চূড়ান্ত ও পূর্ণ প্রত্যাহার। একইসঙ্গে তারা আন্তর্জাতিক গ্যারান্টিসহ স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার ওপরও জোর দিয়েছে।
এদিকে আলোচনার পরবর্তী ধাপে বুধবার (৮ অক্টোবর) আলোচনায় যোগ দিচ্ছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জাসিম আল থানি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ এবং জ্যারেড কুশনার-এর সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি।
এ আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো গাজায় আটক ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির পর ইসরাইল যেন পুনরায় হামলা না চালায়, এ বিষয়ে নিশ্চয়তা চাওয়া। এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের জানান, ‘যদি এই চুক্তি সম্পন্ন হয়, আমরা সম্ভাব্য সবকিছু করব যেন কেউ তা লঙ্ঘন না করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, শুধু গাজা নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’
এর আগে সোমবার (৬ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। তাতে ইসরাইল সম্মতি জানিয়েছে, এবং হামাসও কয়েকটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তবে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
এদিকে, গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনে আর্থিক ক্ষতি ৬৮০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। ইসরাইল গত দুই বছর ধরে গাজায় ধারাবাহিক বিমান হামলা চালিয়ে আসছে, যা মানবিক সংকট আরও গভীর করে তুলেছে।
বর্তমানে মিশরের শারম আল–শেখে চলমান এই আলোচনা মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাত নিরসনে একটি সম্ভাব্য মোড় পরিবর্তনের সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে বাস্তব শান্তি আসবে কিনা, তা নির্ভর করছে ইসরাইলি বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহার, আন্তর্জাতিক নিশ্চয়তা এবং দুই পক্ষের বিশ্বাসযোগ্যতা ও অঙ্গীকারের ওপর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ