
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের পশ্চিমবঙ্গজুড়ে এখন আবেগের একটি নাম—‘ডিয়ার মা’। সিনেমাটি যেন মা ও সন্তানের সম্পর্কের সেই চিরন্তন সুরটি ছুঁয়ে যাচ্ছে যা যুগে যুগে মানুষের হৃদয়কে আন্দোলিত করেছে। আর সেই আবেগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বাংলাদেশের গর্বিত কন্যা জয়া আহসান। অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় নির্মিত এই চলচ্চিত্রটিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে তিনি যেন নতুনভাবে দর্শকদের হৃদয় জয় করেছেন।
সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে এক আলাপে জয়া আহসান জানালেন, সিনেমাটি দেখার পর হলে হলে কাঁদছেন মায়েরা। তাঁর ভাষায়, ‘অনেক বয়স্ক মায়েরা আসছেন, যা আমাকে অবাক করছে। অনেকে বহু বছর পর হলে ফিরেছেন শুধুমাত্র “ডিয়ার মা” দেখার জন্য। অনেকেই সন্তানদের সঙ্গে এসেছেন। সিনেমা শেষে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। কেউ কেউ আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরেছেন, চোখে জল নিয়ে বলেছেন, “এটা তো আমার গল্প!”’
জয়া বর্তমানে সিনেমার প্রচারে কলকাতায় রয়েছেন এবং প্রতিদিন যাচ্ছেন একেকটি সিনেমা হলে। জানিয়েছেন, সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখে তিনি মুগ্ধ। ‘অনেক হলে হাউজফুল যাচ্ছে। এমনকি অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন, যা সত্যিই অভাবনীয়।’
তিনি জানান, কলকাতার নন্দন, ইনক্স, সিনেপলিস, সাউথ সিটিসহ চার-পাঁচটি হলে তিনি গিয়েছেন। প্রতিটি হলে একই চিত্র—আবেগে ভাসছে দর্শক। বিশেষ করে মা-বাবা ও সন্তানদের উপস্থিতি এবং আবেগঘন প্রতিক্রিয়া তাঁকে নাড়া দিয়েছে। জয়া বলেন, ‘এই সিনেমাটা শুধু বিনোদনের নয়, এটা একটা অনুভূতির ছবি। “ডিয়ার মা”-তে রয়েছে দত্তক নেওয়ার প্রসঙ্গ, মায়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, সন্তানকে আঁকড়ে ধরে রাখার আর্তি। পরিচালক এসবকে অসাধারণভাবে পর্দায় তুলে এনেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা মা ও সন্তানের সম্পর্কের এক অনন্য গল্প। দর্শকরা শুধু গল্পটা দেখছেন না, তারা নিজেদের খুঁজে পাচ্ছেন এই গল্পে। আর সেখানেই সিনেমাটির সার্থকতা।’
বিশেষ একটি মুহূর্ত স্মরণ করে জয়া বলেন, ‘নন্দনের শোতে একজন মা তাঁর মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন। বলছিলেন, “তুই না থাকলে আমি কী করে বাঁচতাম!” আমি সেই দৃশ্য দেখে অভিভূত হয়ে পড়ি।’
এই সিনেমার প্রিমিয়ারে জয়া তাঁর নিজের মাকে সঙ্গে নিয়ে অংশ নিয়েছিলেন। মা-ও সিনেমাটি দেখে ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলেন বলে জানান তিনি। ‘মা বলেছিলেন, আমি এমন কিছু দেখিনি বহুদিন। দর্শক যেভাবে সিনেমাটি গ্রহণ করছেন, এতে আমি গর্বিত।’
এক প্রশ্নের উত্তরে জয়া জানান, সিনেমা হলে যাওয়া সময় তিনি এবং তাঁর মা বাংলাদেশি জামদানি পরে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল দেশি নকশার গয়না। বলেন, ‘আমি চেষ্টা করি দেশের ঐতিহ্যকে সব জায়গায় তুলে ধরতে। জামদানি আমার গর্ব। এই সিনেমার প্রচারে গিয়ে আমি দেশের পোশাককে প্রতিনিধিত্ব করছি।’
জয়া আহসান ‘ডিয়ার মা’-কে তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম আবেগঘন ও গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হিসেবে বিবেচনা করছেন। তাঁর মতে, এই সিনেমাটি শুধু ভারতের নয়, বাংলাদেশের দর্শকদের জন্যও একটি আবেগঘন অভিজ্ঞতা হতে পারে। তিনি চান বাংলাদেশেও যেন সিনেমাটি মুক্তি পায় এবং মা ও সন্তানের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
এতদিন যারা বাংলা সিনেমায় আবেগ খুঁজে পাননি, ‘ডিয়ার মা’ তাদের নতুন করে আবেগের সংজ্ঞা দিতে সক্ষম হচ্ছে। আর সেই আবেগের ভাষ্যকার হয়ে উঠেছেন জয়া আহসান, যার প্রতিটি উপস্থিতি এখন পশ্চিমবঙ্গের হলগুলোতে এক একটি হৃদয়ছোঁয়া মুহূর্ত হয়ে থাকছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ