
ছবি: সংগৃহীত
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তির প্রথম ধাপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। বুধবার (২০ আগস্ট) রাতে প্রকাশিত এই ফলাফলে দেখা গেছে, দেশের মোট ৮ হাজার ১৫টি কলেজ ও আলিম মাদরাসার মধ্যে ৩৭৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রথম ধাপে এক জন শিক্ষার্থীও পায়নি। আরও বিস্ময়কর তথ্য হলো—এসবের মধ্যে ১০টি কলেজে কেউ আবেদন করার সময় পছন্দক্রমও দেয়নি।
ফলাফল বিশ্লেষণে শিক্ষা বোর্ড ও ভর্তির ওয়েবসাইট সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে অনলাইনে আবেদন করেছিলেন ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৩১০ জন শিক্ষার্থী। তারা মিলে পছন্দক্রম দিয়েছেন ৫৯ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৭টি। এর মধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬২ জন। কিন্তু মোট ২৫ হাজার ৩৪৮ জন শিক্ষার্থী কোনো কলেজে আসন পাননি। তাদের মধ্যে আশ্চর্যজনকভাবে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৭৬৫ জন।
দেশব্যাপী একযোগে ভর্তির কার্যক্রমে শূন্য আসনের এই কলেজগুলো মূলত বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব কলেজে ভর্তি হয়নি, তার বেশির ভাগই গ্রামীণ বা প্রান্তিক এলাকার। আবার কিছু কলেজে শিক্ষার মান ও অবকাঠামোগত ঘাটতি এতটাই প্রকট যে শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় সেসব এড়িয়ে গেছে। শিক্ষাবোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান—এমন অনেক কলেজ আছে যেগুলোতে ছাত্রসংখ্যা দিন দিন কমছে। এবার তারা পুরোপুরিই শূন্য হয়ে পড়ল।
শিক্ষক নেতাদের মতে, কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট, বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাব না থাকা, লাইব্রেরি ও আইসিটি সুবিধার ঘাটতি, এমনকি নিরাপত্তাজনিত সমস্যা থাকায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা এসব প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে চান না। এ ছাড়া শহরমুখী শিক্ষার্থী প্রবণতাও বড় কারণ।
যে ১০টি কলেজে কেউ চয়েস দেয়নি, সেগুলো একেবারেই অবহেলিত। স্থানীয়রা বলছেন—এগুলো কেবল কাগজে-কলমে কলেজ হিসেবে আছে। শ্রেণিকক্ষ নেই, নিয়মিত ক্লাস হয় না, শিক্ষকরা অনুপস্থিত থাকেন। ফলে কেউই এসব প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকাভুক্ত করেনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এত বড় সংখ্যক কলেজে শিক্ষার্থী না পাওয়া বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হবে।
প্রথম ধাপে বাদ পড়া ২৫ হাজার ৩৪৮ জন শিক্ষার্থীর সামনে এখনো সুযোগ রয়েছে। তাদের দ্বিতীয় ধাপে আবেদন করতে হবে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, এদের মধ্যে জিপিএ ৫ পাওয়া ৫,৭৬৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। কেন তারা বাদ পড়ল, সেটিও আলোচনার বিষয়। বিশ্লেষকদের মতে, অনেকে জনপ্রিয় ও নামকরা কলেজেই শুধু পছন্দক্রম দিয়েছেন। প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায় তারা প্রথম ধাপে আসন পাননি।
ভর্তির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যমতে, নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ৩৩৫ টাকা নিশ্চায়ন ফি (কনফার্মেশন ফি) দিতে হবে। বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এ টাকা পরিশোধ করা যাবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিশ্চায়ন ফি না দিলে তাদের ভর্তি বাতিল হয়ে যাবে এবং দ্বিতীয় ধাপে আবেদন করতে হবে।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর প্রথম ধাপে এত বেশি শিক্ষার্থী আসন পেলেও কিছু কলেজে শূন্য আসন থাকা অবাক করা বিষয়। তবে তারা আশা করছেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে এসব কলেজ কিছু শিক্ষার্থী পাবে। আবার যেসব কলেজে কেউ যায়নি, সেগুলোর টিকে থাকার প্রশ্ন উঠেছে।
অভিভাবকদের অনেকে বলছেন, অনেক কলেজের শিক্ষার মান এত খারাপ যে সন্তানদের ভবিষ্যতের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে ভর্তি করানো যায় না। কিছু কলেজে নিরাপত্তা সমস্যা, মাদকাসক্তদের আড্ডা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি কারণে ছাত্রছাত্রী আসছে না।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ৩৭৮টি কলেজ শূন্য আসনে থেকে যাওয়া দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য বড় সতর্কবার্তা। সরকারকে দ্রুত এসব প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়ন করতে হবে। না হলে প্রতি বছর এদের অস্তিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
সারসংক্ষেপে দেখা যাচ্ছে—২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের প্রথম ধাপেই দেশের ৩৭৮টি কলেজে এক জনও ভর্তি হয়নি। ১০টি কলেজে কোনো শিক্ষার্থী আবেদনও করেনি। পাশাপাশি, ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী কলেজ পাননি, যাদের মধ্যে জিপিএ ৫ পাওয়া হাজারো শিক্ষার্থীও আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে তারা সবাই ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে শূন্য আসনে পড়ে থাকা কলেজগুলো নিয়ে বড় ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ