
ছবি: সংগৃহীত
কর শনাক্তকরণ নম্বর বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) বাংলাদেশের প্রতিটি করদাতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি। এটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনে ইস্যু করা হয় এবং মূলত আয়কর রিটার্ন দাখিল ও ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়। তবে করদাতার মৃত্যু, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়া বা অন্যান্য বিশেষ কারণে টিআইএন সনদ আর প্রযোজ্য না হলে তা বাতিলের নিয়ম রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, টিআইএন বাতিল করলে হয়তো নতুন করে ব্যবসার কাগজপত্র বা অন্যান্য নথি করতে হবে। বাস্তবে বিষয়টি এমন নয়। প্রয়াত বাবার টিআইএন বাতিল করতে চাইলে উত্তরাধিকারীরা নিশ্চিন্তে তা করতে পারেন, কারণ এনবিআর নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসারে এটি করা হয় এবং এতে ব্যবসার কাগজপত্রে কোনো প্রভাব পড়ে না।
কেন টিআইএন বাতিল করতে হয়?
টিআইএন সাধারণত জীবিত ব্যক্তি বা কার্যকর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ইস্যু করা হয়। ব্যক্তি মারা গেলে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট টিআইএনটি আর বৈধ থাকে না। কিন্তু এটি বাতিল না করলে নিয়মিত কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে যায়। ফলে মৃত ব্যক্তির নামে বা বন্ধ ব্যবসার নামে এনবিআর নোটিশ দিতে পারে। এই জটিলতা এড়াতে টিআইএন বাতিল করা প্রয়োজন।
অনলাইনে টিআইএন বাতিলের সুযোগ
প্রযুক্তি নির্ভর সেবার অংশ হিসেবে এনবিআর বর্তমানে টিআইএন বাতিলের অনলাইন ব্যবস্থা চালু করেছে। এর ফলে করদাতারা সহজেই ঘরে বসেই বাতিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন। অনলাইনে বাতিল করতে হলে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়—
-
প্রথমে এনবিআর-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট nbr.gov.bd-এ প্রবেশ করতে হবে।
-
সাইটে আগে থেকে অ্যাকাউন্ট থাকলে লগইন করতে হবে, না থাকলে নতুন করে সাইন আপ করে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
-
লগইন করার পর "টিআইএন বাতিল" সংক্রান্ত আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে। সেখানে টিআইএন নম্বর, ব্যবসা বা পণ্যের বিবরণ, বাতিলের কারণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে।
-
ফর্ম পূরণের পর অনলাইনে সাবমিট করতে হবে। এনবিআর তখন আবেদনটি যাচাই করবে এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত তথ্য বা কাগজপত্র চাইতে পারে।
-
সবকিছু সঠিক থাকলে এনবিআর টিআইএন বাতিল অনুমোদন করে একটি নোটিশ প্রদান করবে।
অফলাইনে টিআইএন বাতিলের প্রক্রিয়া
সবাই অনলাইনে আবেদন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তাই অফলাইনেও আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এজন্য কাস্টমস বা সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চল/রেজিস্ট্রেশন অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করতে হয়। প্রক্রিয়াটি হলো—
-
টিআইএন নম্বরসহ আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।
-
আবেদনকারীর নাম (বা প্রতিষ্ঠানের নাম), জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রয়োজনে ব্যবসা বন্ধ হওয়ার ঘোষণা দিতে হবে।
-
পাশাপাশি, বিগত তিন অর্থবছরের শূন্য রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তিস্বীকারপত্রের কপি জমা দিতে হবে।
-
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আবেদন যাচাই করে যদি সন্তুষ্ট হয়, তবে টিআইএন বাতিল করবে এবং আবেদনকারীকে একটি আনুষ্ঠানিক বাতিল সনদ প্রদান করবে।
টিআইএন বাতিল হলে কী পরিবর্তন হয়?
একবার টিআইএন বাতিল হয়ে গেলে আর কোনো কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকে না। মৃত ব্যক্তির বা বন্ধ হওয়া ব্যবসার নামে আর কর ফাইল করতে হয় না। একই সঙ্গে, পুরোনো টিআইএন নম্বর ভবিষ্যতে আর ব্যবহার করা যাবে না। তবে প্রয়োজনে নতুন ব্যবসা শুরু করলে বা কোনো কারণে পুনরায় করদাতা হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নিতে হলে নতুন টিআইএন আবেদন করে নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
কর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টিআইএন বাতিল করা অনেক সময় জটিল মনে হলেও এটি আসলে একটি সহজ প্রক্রিয়া। অনলাইনে বা অফলাইনে সঠিক তথ্য জমা দিলে দ্রুতই এটি সম্পন্ন করা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, টিআইএন বাতিল না করলে অপ্রয়োজনীয় কর নোটিশ বা জরিমানার ঝুঁকি থাকে। তাই করদাতা বা তাদের উত্তরাধিকারীদের উচিত সময়মতো এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা।
টিআইএন একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি হলেও এটি কেবল জীবিত ব্যক্তি বা সক্রিয় ব্যবসার জন্য কার্যকর। প্রয়াত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী কিংবা বন্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক চাইলে সহজেই টিআইএন বাতিল করতে পারেন। এনবিআর নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে অনলাইন কিংবা অফলাইন—দুইভাবেই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুযোগ রয়েছে। একবার বাতিল হয়ে গেলে ভবিষ্যতে কর রিটার্নের ঝামেলা থাকে না, আর প্রয়োজনে নতুন টিআইএন আবার নেওয়া সম্ভব হয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ