
ছবি: সংগৃহীত
খাগড়াছড়ি জেলার সাম্প্রতিক সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা ১৪৪ ধারা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চলছে নানা আলোচনার ঝড়। তবে জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার আশ্বস্ত করেছেন, সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতামতের ভিত্তিতে এ ধারা প্রত্যাহার করা হবে। বুধবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জেলা সদরের স্বনির্ভর বাজারে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
জেলা প্রশাসক জানান, সাম্প্রতিক অশান্ত পরিস্থিতির কারণ খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যে একটি ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং প্রাথমিকভাবে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ চলছে। আগামী রোববার থেকে সরেজমিন তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে। এতে ঘটনার প্রকৃত কারণ, দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী শনাক্ত করার চেষ্টা করা হবে।
তিনি বলেন, “তদন্তের মাধ্যমে আমরা বের করব কীভাবে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলো। এরপর দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
জেলা প্রশাসক আরও জানান, খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সাম্প্রতিক ঘটনায় যেসব ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। তালিকা সম্পন্ন হওয়ার পর বিশেষ বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, “মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা তাদের পাশে আছি। ক্ষতির পরিমাণ যাচাই-বাছাই করে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ব্যবসায়ীদের সহায়তা দেওয়া হবে।”
পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায়। তারা বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ, বিজিবি ও অন্যান্য বাহিনী দিনরাত মাঠে রয়েছে। বর্তমানে অবস্থা শান্ত হলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সতর্কতা জারি থাকবে।
পুলিশ সুপার জানান, “নতুন করে কোনো সহিংসতা যাতে না ঘটে, সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। মানুষ যাতে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে, ব্যবসায়ী যাতে দোকান খুলতে পারে—সেদিকে আমাদের নজর।”
উল্লেখ্য, স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে ডাকা অবরোধ কর্মসূচির সময় গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর বাজার এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়। অনেক ব্যবসায়ী সর্বস্ব হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে এবং বাজার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
এই ঘটনার পর থেকেই খাগড়াছড়ি জেলা সদরসহ আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। তবে গত কয়েকদিনে নতুন কোনো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও ব্যবসায়ীরা এখনও শঙ্কা কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ জেলা প্রশাসকের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও দ্রুত ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন। এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমাদের দোকান ভেঙে দিয়েছে, মালামাল লুট করেছে। আমরা এখন পুরোপুরি পথে বসেছি। সরকার যদি দ্রুত সহায়তা না দেয়, তাহলে পরিবার নিয়ে অনাহারে থাকতে হবে।”
অন্যদিকে সাধারণ জনগণ বলছেন, দীর্ঘদিন ১৪৪ ধারা জারি থাকলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে। স্কুল-কলেজ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করতে হলে পরিস্থিতি যত দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিক করা জরুরি।
খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তরা প্রশাসনের সহযোগিতার অপেক্ষায় দিন গুনছেন। জেলা প্রশাসকের আশ্বাস, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো হবে। তবে স্থানীয়রা মনে করছেন, শুধু প্রশাসনিক আশ্বাস নয়, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপই পারে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং সাধারণ মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ