
ছবি: সংগৃহীত
খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থমথমে অবস্থার মধ্যে রয়েছে। জেলা সদর পৌরসভা, খাগড়াছড়ি পৌর শহরের জিরো মাইল, কলেজ গেট এলাকা, শহরের দক্ষিণ মাথা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনী চেকপোস্ট বসিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালাচ্ছে। সন্দেহজনক কোনো কর্মকাণ্ড ধরা পড়লে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা প্রযোজনা অব্যাহত রয়েছে।
খাগড়াছড়িতে চলমান এই পরিস্থিতি পাহাড়ি-বাঙালি মধ্যে কোনো বিদ্বেষ বা ভেদাভেদের কারণে নয়, বরং স্থানীয়ভাবে ঘটে যাওয়া সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে। খাগড়াছড়ি বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. আবদুল মোত্তাকিম সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, “খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙালি কোনো ভেদাভেদ নেই। যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। শহরের বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার ও বিজিবি সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহল চালাচ্ছেন। বিজিবি ১০টি প্লাটুন সদস্য শহরের বিভিন্ন জায়গায় দিনে ও রাতে নজরদারি চালাচ্ছে।”
নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় আটকে পড়া পর্যটকরা ধাপে ধাপে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ি শান্তি পরিবহনের সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রশাসনের সহযোগিতায় তারা ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে যাত্রীদের জন্য টিকিট বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে কৃষি পণ্যবাহী ট্রাক ও অন্যান্য ব্যবসায়িক যানবাহন নিরাপত্তার কারণে কিছুটা বিলম্বের শিকার হয়েছেন, যা ব্যবসায়ীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করেছে। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, আটকে পড়া পণ্যবাহী ট্রাকগুলোও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় স্থানীয়ভাবে বিক্ষোভ ও সহিংসতা সৃষ্টি হওয়ার পর তিনজন নিহত হয়েছেন। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। নিহতরা হলেন: সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের দেবলছড়ি চেয়ারম্যান পাড়ার আথুই মারমা (২১), হাফছড়ি ইউনিয়ন সাং চেং গুলি পাড়ার আথ্রাউ মারমা (২২) এবং রামেসু বাজার বটতলা এলাকার তৈইচিং মারমা (২০)।
খাগড়াছড়ি বিজিবি সেক্টর কমান্ডার আরও বলেন, “নিহতদের ঘটনা এবং সহিংসতার বিষয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে। আমাদের লক্ষ্য হলো সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করা।”
সংবাদ সম্মেলনে সেক্টর কমান্ডারের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ৩২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরান কবির উদ্দিন, সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান, সেক্টর সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. ইউনুস আলীসহ অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তারা জানান, সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিশেষ টহল ও চেকপোস্ট কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
পরিস্থিতি এখনও শিথিল হয়নি, তাই পর্যটক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সব ধরনের যানবাহন ও পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রাখতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ