
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাম্প্রতিকতম হতাশার অধ্যায় হলো এবারের এশিয়া কাপ। ফাইনালে ওঠার দ্বারপ্রান্তে গিয়েও শেষ পর্যন্ত সেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের দেখা পেল না টাইগাররা। পাকিস্তানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে দলকে। সমর্থকদের অগাধ ভালোবাসা ও প্রত্যাশা থাকা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত ফল দিতে না পারার কষ্টটাই এখন বহন করছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক লিটন দাস। আর সেই ব্যর্থতার দায় একা নিজের নয়, বরং পুরো দলের হয়ে তিনি প্রকাশ্যে সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাসে লিটন লিখেছেন— “এশিয়া কাপ ২০২৫-এ আমরা দল হিসেবে আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ফাইনালে ওঠা এবং শিরোপা জয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা তা অর্জন করতে পারিনি। এজন্য আমরা বাংলাদেশের সব আবেগপ্রবণ সমর্থকদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইছি।”
তার এই ক্ষমা প্রার্থনা সমর্থকদের হৃদয় ছুঁয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিটনের পোস্টে আবেগঘন মন্তব্য করেছেন। একাংশ আবার লিখেছেন, খারাপ সময় আসবেই, কিন্তু লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। কারণ বাংলাদেশ দল এখন আর কেবল ছোট দল নয়, বরং প্রতিটি বড় টুর্নামেন্টে সাফল্যের দাবিদার হিসেবে সমর্থকেরা তাদের দেখেন।
লিটন নিজের ব্যক্তিগত কষ্টের কথাও প্রকাশ করেন স্ট্যাটাসে। চোটের কারণে টুর্নামেন্টের শেষ দুটি ম্যাচে মাঠে নামতে পারেননি তিনি। সেই আক্ষেপ নিয়েই লিখেছেন— “ব্যক্তিগতভাবে চোটের কারণে শেষ দুটি ম্যাচ খেলতে না পারা আমার জন্য হৃদয়বিদারক ছিল। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম মাঠে ফেরার, কিন্তু সম্ভব হয়নি। এটি দীর্ঘ সময় আমার মনে কষ্টের দাগ হয়ে থাকবে।”
শুধু এশিয়া কাপেই নয়, আসন্ন আফগানিস্তান সিরিজেও মাঠে নামতে পারবেন না বলে জানালেন লিটন। জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যাটসম্যান ও অধিনায়ক হিসেবে এ অনুপস্থিতি দলের জন্য বড় ধাক্কা। লিটন লিখেছেন— “একই কারণে আফগানিস্তান সিরিজেও অংশ নিতে পারব না। এটা আমাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে। আমি চেষ্টা করব দ্রুত সেরে উঠে আবার মাঠে ফিরতে।”
তবে কেবল হতাশার কথাই নয়, সমর্থকদের অকুণ্ঠ ভালোবাসার প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনি লিখেছেন— “সবশেষে বলতে চাই, পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে আমাদের পাশে থাকার জন্য এবং অভাবনীয় সমর্থন দেওয়ার জন্য আপনাদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ। আমরা সত্যিই ভাগ্যবান, কারণ বিশ্বের সেরা সমর্থকেরা আমাদের আছে। আশা করি, আমরা খুব দ্রুত আপনাদের প্রাপ্য আনন্দ ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হব।”
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স ছিল উত্থান-পতনে ভরা। শুরুটা ভালো হলেও শেষ দিকে এসে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি দল। বিশেষ করে পাকিস্তানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতায় স্বপ্ন ভেঙে যায়। সমর্থকেরা মনে করেছিলেন, এবার হয়তো ট্রফির খরা ঘুচবে, কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার বড় মঞ্চে শেষ মুহূর্তে হোঁচট খেয়েছে দল। তবে প্রতিবারই সমর্থকেরা নতুন আশায় বুক বাঁধেন। লিটনের পোস্টে বোঝা গেল, খেলোয়াড়েরা নিজেরাও সেই ব্যর্থতার কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে একইসঙ্গে এটাও স্পষ্ট যে, তারা সামনে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ দলের ভক্তদের জন্য এই ক্ষমা প্রার্থনা নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এক ধরনের প্রতিশ্রুতি। লিটন জানালেন, তারা হাল ছাড়বেন না। মাঠে আবারো নতুন করে লড়াই শুরু করবেন। সমর্থকেরা যা প্রাপ্য—একটি বড় শিরোপা, সেটিই ফিরিয়ে দিতে চান জাতীয় দলের অধিনায়ক ও তার সতীর্থরা।
৫ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া আফগানিস্তান সিরিজে লিটনকে না পাওয়া গেলেও বাংলাদেশের সামনে নতুন খেলোয়াড়দের জন্য নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ তৈরি হবে। সমর্থকেরা এখন তাকিয়ে আছেন সেই দিকে। কিন্তু তার আগে লিটনের এই আবেগঘন বার্তাই দল-সমর্থক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তুলেছে।
আপনি চাইলে আমি এটিকে আরও দীর্ঘ বিশ্লেষণমূলক করতে পারি, যেখানে বিশেষজ্ঞ, সাবেক ক্রিকেটার ও সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া যোগ হবে। চাইবেন কি আমি সেইভাবে লিখে দিই?
বাংলাবার্তা/এমএইচ