
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে যদি নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হয় এবং প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত করা হয়, তবে দেশে আবারও ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি হতে পারে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, এ ধরনের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুধু গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করবে না, বরং রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে।
শনিবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের শরিক দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ তার বক্তব্যে বলেন, দেশে এখনো এমন একটি শক্তি সক্রিয় রয়েছে যারা আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছে। তাদের লক্ষ্য হলো নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিলম্বিত করা কিংবা পুরো প্রক্রিয়াকে বানচাল করে দেওয়া। তার মতে, এই শক্তি একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছে এবং তাদের উদ্দেশ্য গণতন্ত্রকে দুর্বল করা। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “বাংলাদেশে যদি নির্বাচন বিলম্বিত হয়, তাহলে ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি হবে আবার। এটি আমাদের জন্য ভয়াবহ হবে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান একটি বৈধ প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়েছে এবং কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে সেটি পরিবর্তনের অধিকার নেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “কোনো একটি আইনানুযায়ী বৈধ ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানকে পরিবর্তন করার কোনো অধিকার আমাদের কারও নেই।” যদি একবার সংবিধান অবৈধভাবে পরিবর্তন হয়, তবে দুই বছর কিংবা পাঁচ বছর পর পুনরায় একই দাবি ওঠার আশঙ্কা থেকেই যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে। তবে জনগণের এই অভিপ্রায় বাস্তবায়নের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন হয়েছে এবং উপদেষ্টাদের শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা সেটিকেই বৈধ প্রক্রিয়া মনে করি।”
তিনি উল্লেখ করেন, জনগণের অভিপ্রায় চূড়ান্ত হলেও সেটিকে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে বৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি (পিআর) চালুর প্রস্তাব নিয়েও সমালোচনা করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রায় ৫৬ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতি বোঝেই না। তাহলে এই পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা কেন?” তার মতে, এসব আলোচনা মূলত জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং রাজনৈতিক বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দেশের স্বার্থ ও জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে যারা হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করছে, তাদের জনগণের স্বার্থে সঠিক পথে ফিরে আসতে হবে। তিনি বলেন, “জাতিকে বিভ্রান্ত করার সময় শেষ। এখন সময় দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার।”
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এখন আলোচনা হচ্ছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে কিনা। তার মতে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে সংবিধান সংশোধন কিংবা নতুন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরবর্তী জাতীয় সংসদের ওপরই দায়িত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, “শুধু সংবিধানের অংশটুকু বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী সংসদের প্রয়োজন এবং সংবিধান সংশোধনের নির্ধারিত প্রক্রিয়া প্রয়োজন।”
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন এনডিপির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল হারুন। এতে আরও বক্তব্য দেন অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, গণদলের সভাপতি এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা সবাই আসন্ন নির্বাচনকে সময়মতো ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করার আহ্বান জানান এবং ফ্যাসিবাদী রাজনীতির পুনরুত্থানের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক শক্তি দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে যে কোনো মূল্যে ধরে রাখতে চায়। তবে নির্বাচনী বিলম্ব বা প্রক্রিয়া বানচালের মতো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে দেশ আবারও স্বৈরাচারী বা ফ্যাসিবাদী রাজনীতির মুখোমুখি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ