
ছবি: সংগৃহীত
ঈদুল আজহা সামনে রেখে রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন নগরবাসী। অনেকে আগেভাগেই রওনা হয়েছেন পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতে। যেহেতু অনেক কর্মজীবীর ছুটি কিছুটা আগেই শুরু হয়েছে, তাই কেউ কেউ আগেভাগেই রাস্তায় নেমে পড়েছেন। এতে করে ঈদের কয়েকদিন আগেই ধীরে ধীরে শুরু হয়েছে রাজধানী ছাড়ার যাত্রা। যদিও এখনো পুরো মাত্রায় ঈদের ঘরমুখো যাত্রার ভিড় দেখা যাচ্ছে না, তবে আজ মঙ্গলবার (৪ জুন) থেকে সেই চাপ বাড়বে বলে ধারণা করছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, যারা ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঈদের আগেই গিয়েছেন, তাদের জন্য ফিরতি ট্রেন টিকিটের ব্যবস্থা আজ থেকে শুরু হচ্ছে। মঙ্গলবার (৩ জুন) রেল কর্তৃপক্ষ ১৩ জুনের ফিরতি ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু করবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, ঈদের পরে ১৩ জুনের ফিরতি টিকিটের অনলাইন বিক্রি সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে। যাত্রীরা "রেলসেবা" অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। ফিরতি টিকিট বিক্রি চলবে পর্যায়ক্রমে ৮ জুন পর্যন্ত।
রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনেও এখনো পুরোপুরি ভিড় শুরু হয়নি। সোমবার (৩ জুন) গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বাস কাউন্টারই ফাঁকা পড়ে আছে। সাধারণত ঈদের সময় বাস কাউন্টারগুলোতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়, দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যায় না। কিন্তু এবার সেই চিত্র দেখা যায়নি। কাউন্টারে বসে থাকা কর্মীরা অলস সময় পার করছেন, কেউ কেউ আবার যাত্রী না থাকায় দোকানই খুলেননি।
সাকুরা পরিবহনের ম্যানেজার আলম বলেন, “যখন পদ্মা সেতু হয়নি, তখন ঈদের এক সপ্তাহ আগে এই টার্মিনালে দাঁড়ানোর জায়গা থাকত না। তখনকার তুলনায় এখন খুবই স্বাভাবিক অবস্থা। সকালে আমাদের মাত্র তিনটি বাস গাবতলী ছেড়েছে। যেসব যাত্রী অগ্রিম টিকিট কেটেছে, তারা ৪, ৫ ও ৬ জুনে ঢাকাছাড়া হবে বলে ধারণা করছি।”
কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে সোমবার (৩ জুন) যাত্রীদের আনাগোনা তুলনামূলক বেশি ছিল। সাধারণ দিনের চেয়ে যাত্রী সংখ্যা বেশি হওয়ায় স্টেশনে ছিল সক্রিয় পরিবেশ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদের আগে তিনদিন—৪, ৫ ও ৬ জুন—প্রতিদিনই যাত্রীদের চাপ বাড়বে এবং ট্রেনগুলোতে উপচে পড়া ভিড় থাকবে।
তবে এই বাড়তি ভিড়ের কারণে সময়সূচিতে কিছুটা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সোমবার ৬টি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে ছাড়ে। এগুলোর মধ্যে ছিল কালনী, রংপুর, এগারসন্ধ্যুর, একতা ইত্যাদি। গড়ে ২০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্ব হয়েছে এসব ট্রেনে। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিরিক্ত যাত্রী ও বৃষ্টির কারণে ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ের তুলনায় কিছুটা ধীরগতিতে চলছে। দিনে গড়ে ৪৩ জোড়া আন্তঃনগর এবং ২৬ জোড়া মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করছে, তাই ট্র্যাকের ওপর চাপ বাড়ায় বিলম্ব হচ্ছে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, “বৃষ্টির কারণে কিছু ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে। যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় কিছু ট্রেন ধীরগতিতে চালাতে হচ্ছে, তাই এই বিলম্ব হচ্ছে। তবে এটিকে শিডিউল বিপর্যয় বলা যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি বিনা টিকিটের যাত্রী নিয়ন্ত্রণে রাখতে। ঈদের সময় ট্রেনে বিনা টিকিটে ওঠার প্রবণতা বেড়ে যায়, যা নিয়ম বহির্ভূত এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই প্রতিটি ট্রেনে টিকিট যাচাইয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
ঈদের সময় যাত্রীদের নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করতে রেলওয়ে পুলিশ, স্টেশন নিরাপত্তা কর্মী ও অন্যান্য বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। ট্রেন ও স্টেশনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একইভাবে সড়কপথেও বাড়তি যাত্রীর চাপ সামলাতে ট্রাফিক বিভাগ বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা নিয়েছে।
পরিবহণ মালিকরাও জানিয়েছেন, আজ থেকে যাত্রীদের ভিড় বাড়বে এবং ৫ জুনের পর পূর্ণমাত্রার চাপ শুরু হবে। বাস ও ট্রেন দুটোতেই টিকিটধারী যাত্রীদের যাত্রা নিশ্চিত করতে বাড়তি কর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, ঈদযাত্রার প্রস্তুতি এবার কিছুটা গোছানো এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে এগোচ্ছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যাত্রীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে ফেরার সময়ের ট্রাফিক বা ট্রেনের চাপ, যার জন্য আগেভাগেই প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ