
ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিশেষ ঈদ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে ঘরমুখো মানুষের সুবিধার্থে আজ মঙ্গলবার শুরু হয়েছে ঈদযাত্রার শেষ দিনের—অর্থাৎ ৬ জুন তারিখে ট্রেনে যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি। দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিটি ঈদে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের শহরগুলো থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ গ্রামে ছুটে যান প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবারও রেল কর্তৃপক্ষ পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে টিকিট বিক্রি ও যাত্রী পরিবহনে।
সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলগামী আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর অগ্রিম টিকিট বিক্রি। একইদিনে দুপুর ২টা থেকে বিক্রি শুরু হবে পূর্বাঞ্চলগামী ট্রেনগুলোর টিকিট। এই বিক্রি হচ্ছে শতভাগ অনলাইনে, অর্থাৎ কোনোভাবেই কাউন্টারে গিয়ে টিকিট সংগ্রহ করার সুযোগ থাকছে না। এটি যাত্রীদের হয়রানি ও দীর্ঘ লাইন থেকে রক্ষা করতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ঈদ কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার শুধুমাত্র ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতেই প্রতিদিন ৩৩ হাজার ৩১৫টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। ঈদে যাত্রী চাপ সামাল দিতে এবং ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ইতোমধ্যেই একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যাতে করে সময়মতো ট্রেন চলাচল, যাত্রী নিরাপত্তা এবং জরুরি সহায়তার বিষয়গুলো নিশ্চিত করা যায়।
ঈদের আগের সাত দিনের ট্রেন টিকিটগুলো ২১ মে থেকে ধাপে ধাপে বিক্রি শুরু হয়েছে। ৩১ মে তারিখের টিকিট বিক্রি হয় ২১ মে; ১ জুনের টিকিট ২২ মে; ২ জুনের টিকিট ২৩ মে; ৩ জুনের টিকিট ২৪ মে; ৪ জুনের টিকিট ২৫ মে; এবং ৫ জুনের টিকিট ২৬ মে। আজ ২৭ মে বিক্রি শুরু হয়েছে ৬ জুনের টিকিট। ঈদের ছুটির শুরুতেই যারা ঢাকা ছাড়তে চান তাদের জন্য এই দিনটির টিকিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, এবারকার ঈদে টিকিট বিক্রির পুরো প্রক্রিয়াটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাত্রীদের ভোগান্তি হ্রাসে। রেলওয়ের নির্ধারিত মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকিট কেটে যাত্রীরা সহজেই ট্রেন ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে টিকিট কিনে তা ফেরত দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। অর্থাৎ কেউ যদি কোনো কারণে যাত্রা বাতিল করেন, সেক্ষেত্রে তিনি সেই টিকিট রিফান্ড করতে পারবেন না।
প্রতিজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারবেন একবারে, যাতে অধিক সংখ্যক যাত্রী টিকিট পাওয়ার সুযোগ পান। ঈদ যাত্রার টিকিট বিক্রির প্রতিটি ধাপেই হঠাৎ অতিরিক্ত চাহিদার কারণে অনলাইন সিস্টেমে কিছুটা ধীরগতি দেখা দিলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, সার্ভার সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে এবং প্রযুক্তিগত ত্রুটি এড়াতে আলাদা প্রযুক্তি টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঈদে অতিরিক্ত বিশেষ ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। ট্রেনগুলো যেন নির্ধারিত সময়ের ভেতরে স্টেশন ছেড়ে যেতে পারে, সে লক্ষ্যে চালক ও সহকারী চালকদের অতিরিক্ত শিফটে নিয়োজিত রাখা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য রেলস্টেশনগুলোতে পর্যাপ্ত পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। যাত্রাপথে বড় দুর্ঘটনা বা নাশকতা ঠেকাতে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরও মোতায়েন রাখা হচ্ছে।
সবমিলিয়ে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে তাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে জানানো হয়েছে। আগামী ৭ জুন ঈদুল আজহার তারিখ ধরেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে তারিখ পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের শেষ মুহূর্তে হালনাগাদ তথ্য জানতে রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে।
এদিকে, আগাম টিকিট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যাত্রীদের মাঝে উৎসাহ ও চাপ দুটোই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। টিকিট বিক্রির সময় প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টিকিট সংগ্রহের জন্য অনলাইন সাইটে ব্যাপক ভিড় পড়ছে। অনেকে আবার একাধিক বার চেষ্টা করেও কাঙ্ক্ষিত দিনের টিকিট পাচ্ছেন না। ফলে অসাধু দালালচক্র যাতে সক্রিয় না হতে পারে সেজন্য রেলওয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং সাইবার নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এভাবেই এবারও রেলওয়ে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে ঈদের আনন্দ যাত্রীদের কাছে নিরাপদভাবে পৌঁছে দিতে। ঘরমুখো মানুষের যাত্রা যেন নির্বিঘ্ন ও স্বস্তিদায়ক হয়, সেটাই রেলওয়ের মূল লক্ষ্য।
বাংলাবার্তা/এমএইচ