
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আসন্ন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, এই নির্বাচনসমূহ সম্পূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আওতাধীন এবং এতে সেনাবাহিনীর কোনো প্রকার সংশ্লিষ্টতা নেই। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন প্রসঙ্গে সেনাবাহিনী স্পষ্ট করে জানিয়েছে— হস্তক্ষেপের প্রশ্নই ওঠে না।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সরকারি ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, পূর্বেও আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে, কিন্তু তারপরও একটি স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গুজব ছড়াচ্ছে।
বিভ্রান্তিকর প্রচারণা নিয়ে উদ্বেগ
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিছু মহল বারবার সেনাবাহিনীর নাম ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ধরনের মিথ্যা তথ্য মূলত দেশের স্থিতিশীল পরিবেশ নষ্ট করার অপচেষ্টা মাত্র। সেনাবাহিনীর মতে, এসব গুজব শিক্ষাঙ্গনে আসন্ন নির্বাচনী পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।
সেনাবাহিনী মনে করে, সমাজের দায়িত্বশীল নাগরিকদের উচিত হবে এসব গুজবের প্রতি কান না দেয়া এবং নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা প্রতিহত করা।
গণতান্ত্রিক চর্চার প্রত্যাশা
সেনাবাহিনী তাদের বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানায়, দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যা তরুণ প্রজন্মের জন্য গণতান্ত্রিক চর্চার একটি বড় সুযোগ। সেনাবাহিনী আশা প্রকাশ করেছে যে, এ নির্বাচন যেন সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে সম্পন্ন হয়।
তারা আরও উল্লেখ করে যে, ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য নয়, বরং বৃহত্তর জাতীয় রাজনীতির জন্যও একটি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে এটি পুরো জাতির জন্য ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনতে পারে।
ডাকসু নির্বাচনের তাৎপর্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। স্বাধীনতার আগে ও পরে দেশ গঠনে ডাকসুর ভূমিকাকে জাতীয় ইতিহাসের অংশ হিসেবে দেখা হয়। তাই আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তরুণ সমাজ ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।
তবে সেনাবাহিনীর বিজ্ঞপ্তি ইঙ্গিত করে, এ নির্বাচন নিয়ে নানা রকম গুজব ও অপপ্রচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এগুলো তরুণদের বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কৌশল হিসেবে কাজ করছে।
সেনাবাহিনীর শুভকামনা
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেনাবাহিনী নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী, ভোটার এবং সংশ্লিষ্ট সবার জন্য আন্তরিক শুভকামনা জানায়। তারা চায় শিক্ষার্থীরা যেন সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারে। এ ধরনের অভিজ্ঞতা তাদের ভবিষ্যত নাগরিক নেতৃত্বেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে সেনাবাহিনী বিশ্বাস করে।
সোমবারের এই বিজ্ঞপ্তি আসলে শুধু একটি ব্যাখ্যা নয়, বরং আসন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে তৈরি হওয়া নানা বিভ্রান্তি ও গুজবের জবাবও বটে। সেনাবাহিনী আবারও জানিয়ে দিল, ছাত্র সংসদ নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কর্তৃপক্ষের বিষয়, এতে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। একইসঙ্গে বাহিনী প্রত্যাশা করছে, এই নির্বাচন হবে গণতান্ত্রিক চর্চার উজ্জ্বল উদাহরণ, যা জাতীয় নির্বাচনসহ ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ