
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনী স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, কোনো প্রকার উসকানি, মিথ্যাচার কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক প্রচারণার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট করার কোনো সুযোগ নেই এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সর্বদা সজাগ রয়েছে।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সেনানিবাসের অফিসার্স মেস ‘এ’-তে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ মন্তব্য করেন। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন এই ব্রিফিংয়ে।
মুক্তিযুদ্ধের সম্মান রক্ষায় সেনাবাহিনীর অবস্থান
কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে গড়ে ওঠা একটি বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার ভিত্তিতেই আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। কাজেই কোনো মব, কোনো প্রকার গুজব কিংবা প্রচারণার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা খাটো করার সুযোগ নেই। এ ধরনের অপচেষ্টা বরদাশত করা হবে না।”
তিনি আরও যোগ করেন, সেনাবাহিনী সব সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকেও এই ইতিহাসের প্রতি গর্বিত রাখাই বাহিনীর অন্যতম দায়িত্ব।
নির্বাচনকালীন সেনা প্রস্তুতি
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনীকে এখনো পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেয়নি। তবে বাহিনী নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং যে কোনো সময় কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, সেনাবাহিনী অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও দক্ষতার সাথে কাজ করবে, যাতে জনগণ নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।
গুম কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেনাবাহিনী গুম কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না—এমন গুজব ছড়ানো নিয়ে স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া জানায় সেনা সদর। কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, গুম কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা সেনাবাহিনী করেছে, করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “সহযোগিতা করা হচ্ছে না—এই প্রচারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও গুজব।”
মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি
ব্রিফিংয়ে মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন কর্নেল শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, সীমান্তবর্তী এলাকায় জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়া বা তাদের মাধ্যমে বিজিবি বা সেনা ক্যাম্প সম্পর্কে তথ্য জানার প্রচেষ্টা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে সেনাবাহিনী। তিনি বলেন, “সীমান্ত পরিস্থিতি অতি সংবেদনশীল। তাই প্রতিটি ঘটনা আমরা গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।”
রাজবাড়ীর ঘটনায় কঠোর অবস্থান
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলা নামে এক ব্যক্তির মরদেহ কবর থেকে তুলে পোড়িয়ে ফেলার ঘটনায় সেনাবাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কর্নেল শফিকুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সমন্বিতভাবে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা নিয়ে ক্ষোভ
ব্রিফিংয়ে কর্নেল শফিকুল ইসলাম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সেনাবাহিনী জনগণের কল্যাণে দিনরাত কাজ করলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
তবে তিনি এটিও উল্লেখ করেন যে, অনেকেই সেনাবাহিনীর পক্ষে কথা বলছেন এবং ইতিবাচক মন্তব্য করছেন, যা বাহিনীকে অনুপ্রাণিত করে।
সোমবারের এই ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনী আবারও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল যে, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে খাটো করার কোনো প্রচেষ্টা সফল হবে না। সেনাবাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে থেকে দেশ রক্ষার পাশাপাশি জাতীয় মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ