
ছবি: সংগৃহীত
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় আবহাওয়া অধিদপ্তর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বর্তমানে এটি একই এলাকায় অবস্থান করছে এবং পশ্চিম-উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, এ লঘুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে উঠছে এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সমুদ্র বন্দরগুলোতে সতর্কতা
লঘুচাপের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্য ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফলে সমুদ্রের বাতাসে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে, যা উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়ার প্রবণতা বাড়াচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর মানে হলো, এসব অঞ্চলের উপকূলে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল এবং সমুদ্র আপাতত বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে না গিয়ে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে হবে। মৎস্যজীবীদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, বাতাসের দমক ও উঁচু ঢেউয়ের কারণে সাগরে প্রবেশ করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
নদীবন্দরের জন্য আলাদা পূর্বাভাস
সকালে প্রকাশিত পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের কিছু অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব অথবা পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি বা ভারী বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে এসব জেলার নদী বন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সম্ভাব্য প্রভাব ও শঙ্কা
আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, লঘুচাপটি যদি আরও ঘনীভূত হয়, তাহলে সেটি নিম্নচাপ বা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। তখন উপকূলীয় অঞ্চলে আরও বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। বর্তমানে যদিও ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার কোনো সম্ভাবনার কথা বলা হয়নি, তবে সাগর উত্তাল থাকায় জেলেদের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, লঘুচাপের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে আজ দিনভর বৃষ্টিপাত হতে পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ভারী বর্ষণের পাশাপাশি বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এতে শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে এবং গ্রামীণ এলাকায় ফসলের ক্ষতি হওয়ার শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
উপকূলজুড়ে সতর্কবার্তা
কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বরিশাল অঞ্চলে স্থানীয় প্রশাসন থেকে মাইকিং করে মৎস্যজীবী ও উপকূলবাসীদের সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। অনেক স্থানে নৌকা ও ট্রলারগুলো ইতিমধ্যেই উপকূলে ফিরতে শুরু করেছে।
এদিকে, সাগরে ভেসে থাকা ছোট ট্রলারগুলোও দ্রুত নিরাপদ স্থানে আসছে। উপকূলের অনেক গ্রামে লোকজন আগের অভিজ্ঞতার কারণে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। ঝড়ো হাওয়ার সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট, গাছ উপড়ে পড়া বা ঘরবাড়ির ক্ষতির মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ এখনো ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়নি। তবে এর প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে এবং উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সংকেত এবং নদী বন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পরিস্থিতির আরও উন্নয়ন হলে তাৎক্ষণিকভাবে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ