
ছবি: সংগৃহীত
টানা কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেমে থেমে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশে মেঘ জমে অন্ধকার নেমে আসে বারবার, রাস্তাঘাট ভিজে কাদায় পরিণত হচ্ছে, জনজীবনেও তৈরি হচ্ছে ভোগান্তি। তবে এই ভোগান্তির শেষ এখনই হচ্ছে না। বরং আরও বৃষ্টি এবং কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রোববার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়—বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির প্রবণতা বেড়েছে। আগামী কয়েক দিন ধরে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, আগামী সোমবার (২৫ আগস্ট)-এর মধ্যে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে সাগর ও স্থলভাগের ওপর প্রভাব পড়বে, জলোচ্ছ্বাস ও ভারি বর্ষণ ঘটতে পারে। সমুদ্রবন্দরগুলোকে এ সময় সতর্ক থাকতে হবে।
আজকের (২৪ আগস্ট) পূর্বাভাস
রোববার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে দেশের একাধিক বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে—
-
রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
-
রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়ও বৃষ্টি হওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
-
বিশেষ করে রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও অতি ভারি বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে।
আগামীকাল সোমবারের (২৫ আগস্ট) পূর্বাভাস
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আরও বিস্তৃত এলাকায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
-
রংপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে।
-
রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে।
-
এ সময়ও দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মঙ্গলবারের (২৬ আগস্ট) পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্তও বৃষ্টির প্রবণতা থাকবে অব্যাহত।
-
রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে।
-
ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায়ও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
-
এ সময়ও দেশের কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণ হতে পারে।
একই দিন নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। নৌযানগুলোকে সতর্কভাবে চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ছোট নৌযান, ট্রলার ও মাছ ধরার নৌকাগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, টানা ভারি বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। শহুরে এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে। অন্যদিকে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে। কৃষি ক্ষেত্রের জন্য বৃষ্টির প্রভাব ইতিবাচক হতে পারে, তবে অতিরিক্ত বর্ষণ ফসলের ক্ষতির আশঙ্কাও বাড়ায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাফিজুল ইসলাম বলেন, “মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এ ধরনের আবহাওয়ায় নদী ও খালগুলোতে পানি দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। তাই স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে।”
অন্যদিকে, চট্টগ্রামের আবহাওয়া অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, “উপকূলীয় এলাকায় যেহেতু লঘুচাপের সম্ভাবনা রয়েছে, তাই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যেতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। সামনের কয়েক দিন টানা বর্ষণ হলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নদী ও নালার পানি দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। তাই জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ