
ছবি: সংগৃহীত
পতনের এক বছর পরও আওয়ামী আমলে গড়ে ওঠা নষ্ট প্রশাসনিক সংস্কৃতি বহাল আছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলেও সমালোচনার ঝড় থামেনি। নিয়োগ থেকে শুরু করে পদোন্নতি, পদায়ন, সম্পদ বিবরণী, এমনকি সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ প্রণয়ন—সবকিছুতেই ছিল নানা ধরনের বিতর্ক।
অভ্যুত্থানের পর প্রশাসনে এক ধরনের চেয়ার দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যারা দীর্ঘদিন পদোন্নতিবঞ্চিত ছিলেন, তারা কয়েক ধাপে পদোন্নতি পান। অন্যদিকে ডিসি নিয়োগ নিয়ে মারামারি-ধস্তাধস্তির মতো ঘটনা প্রশাসনের মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করে। এক পর্যায়ে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যন্ত ওয়াশরুমে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এ ধরনের ঘটনা দেশের প্রশাসনিক ইতিহাসে নজিরবিহীন।
প্রশাসন ক্যাডার বনাম অন্যান্য ক্যাডারের দ্বন্দ্বও প্রশাসনকে আরও ভাঙন ধরিয়েছে। লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতির উদ্যোগকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে শোডাউন হয়েছে, মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে, এমনকি ফেসবুকে পরস্পরকে আক্রমণ করে লেখা লিখে বহু কর্মকর্তা চাকরি হারিয়েছেন।
এ সময় সরকারি চাকরি আইন সংশোধন নিয়েও তীব্র আন্দোলন হয়। বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুতির বিধান ও আপিলের সুযোগ না রাখায় সচিবালয়ের কয়েক হাজার কর্মচারী মাসের পর মাস কঠোর আন্দোলন চালায়। সচিবালয়ের ভেতরে মাইক ব্যবহার করে মিছিল-মিটিং হয়েছে, যা বিগত ৫৪ বছরে ঘটেনি। অবশেষে সরকার আইন সংশোধন করতে বাধ্য হয়।
সাবেক আমলা এবিএম আব্দুস সাত্তার বলেন, “প্রশাসনের ‘টপ টু বটম’ দুর্নীতিগ্রস্ত। ঘুষ, স্বেচ্ছাচারিতা আর ভ্রষ্টাচার আগের তুলনায় বহুগুণ বেড়েছে।” আরেকজন সাবেক সচিব মন্তব্য করেন, “প্রশাসনে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মতামত নেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক আনুগত্যকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা আরও বেড়েছে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সম্পদ বিবরণী চাওয়ার পরও তা যাচাই করা হয়নি। জনমনে প্রশ্ন জেগেছে—আওয়ামী আমলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা কি তাহলে পার পেয়ে গেলেন? একজন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞের মতে, “এই ব্যর্থতা আসলে জনআস্থাকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করেছে।”
প্রশাসন বিশ্লেষক ফিরোজ মিয়া বলেন, “এমন ভঙ্গুর অবস্থা ৫৩ বছরে দেখা যায়নি। আগামী এক দশকেও এ অবস্থা স্বাভাবিক হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।”
সব মিলিয়ে এক বছরের অভিজ্ঞতা বলে দিচ্ছে—গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী শাসন বিদায় হলেও প্রশাসনের সংস্কার হয়নি। বরং বহাল রয়েছে বিশৃঙ্খলা, দ্বন্দ্ব আর দুর্নীতির স্থায়ী সংস্কৃতি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ