
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত সীমান্ত সম্মেলন এবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকায়। আগামী ২৫ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীর পিলখানায় অবস্থিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরে চার দিনব্যাপী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নিতে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে।
শনিবার (২৩ আগস্ট) ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, এই সম্মেলনে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান নানা সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা এবং ভবিষ্যতে সংঘাত কমিয়ে আনার পথ খোঁজা হবে।
বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে এবারের বৈঠকে যে বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হবে তা হলো—
-
সীমান্তবর্তী এলাকায় আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন ও প্রতিরোধ
-
সীমান্ত এলাকায় এক সারিতে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বিষয়ক জটিলতা
-
বাংলাদেশে আশ্রিত ভারতবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম বন্ধে উদ্যোগ ও পদক্ষেপ
-
সীমান্ত এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও এর প্রভাব
-
সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (CBMP) বাস্তবায়ন
-
দুই বাহিনীর মধ্যে আস্থা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি
দুই দেশের সীমান্তে প্রায়ই গরু পাচার, মাদক চোরাচালান, মানবপাচার, অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রবেশসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। এসব সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এবারের সম্মেলনে আন্তঃসীমান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কৌশল নির্ধারণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রথম আনুষ্ঠানিক সম্মেলন হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২ ডিসেম্বর, কলকাতায়। সেই সময় তৎকালীন বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মেজর জেনারেল কাজি গোলাম দস্তগীর। অপরদিকে বিএসএফের নেতৃত্বে ছিলেন বাহিনীর সাবেক মহাপরিচালক অশ্বিনী কুমার। সেখান থেকেই দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক সংলাপের সূচনা হয়।
এরপর থেকে প্রায় প্রতিবছরই দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পালাক্রমে বাংলাদেশ ও ভারতে এ ধরনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সর্বশেষ বৈঠকটি হয়েছিল গত ১৭-২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। সেখানে উভয় পক্ষই সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
এবারের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তার সরকারের পতনের পর এই প্রথম ঢাকায় বিএসএফের প্রতিনিধি দল আসছে। ফলে এই সম্মেলন শুধু সীমান্ত ব্যবস্থাপনার জন্য নয়, বরং দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ভবিষ্যতে দুই দেশের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্কেও নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে। বিশেষত সীমান্তের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা জোরদার করার ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে।
প্রতিটি সীমান্ত সম্মেলনের অন্যতম মূল লক্ষ্য হলো—পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি। বাংলাদেশ ও ভারতের দীর্ঘ ৪,০৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে প্রতিদিনই ছোট-বড় নানা ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার কারণে মাঝে মধ্যেই দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তাই এ সম্মেলন উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ কমিয়ে আনা এবং সমাধানের পথ খোঁজার একটি বড় সুযোগ।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ঢাকায় আসন্ন বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন কেবল একটি নিয়মিত বৈঠক নয়, বরং এটি দুই দেশের কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ককে আরও গভীর করার সম্ভাবনা তৈরি করছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ