
ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিনেটর মোহাম্মদ ইসহাক দার তিন দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে তিনি এ সফরে এসেছেন, যা দুই দেশের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক তৎপরতায় নতুন মাত্রা যোগ করল।
শনিবার (২৩ আগস্ট) বেলা ২টার দিকে তাকে বহনকারী বিশেষ ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে স্বাগত জানান।
ইসহাক দারের সফরের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। সেখানে বলা হয়, এই সফরে তিনি বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন।
এই সফরকে দুই দেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। কারণ গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে ইসলামাবাদ ও ঢাকার সম্পর্কের মধ্যে নতুন এক উষ্ণতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এতদিন প্রায় অচলাবস্থায় থাকা সম্পর্ক এখন নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পথে।
ঢাকায় অবস্থানকালে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনসহ অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সদস্য ও নীতিনির্ধারকের সঙ্গেও তার আলাপ-আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকগুলোতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পূর্ণ পরিসর নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনায় মূলত রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, বাণিজ্য বৃদ্ধি, বিনিয়োগের সুযোগ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন, এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে।
এর আগে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানও ঢাকায় সফর করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বিশেষভাবে আমদানি-রপ্তানি সহজীকরণ ও সরাসরি জাহাজ চলাচলের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ইসহাক দারের সফরে এ বিষয়গুলো আরও এগিয়ে যাবে বলে কূটনৈতিক মহলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।
এছাড়া বৈঠকগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, জ্বালানি নিরাপত্তা, এবং বৈশ্বিক পরিসরে মুসলিম দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়েও আলাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রমশক্তি রপ্তানি, এবং দারিদ্র্য নিরসনের মতো বিষয়গুলো আলোচনায় স্থান পেতে পারে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে, তা অনেকের মতে অতীতের জটিল সম্পর্ককে পেছনে ফেলে ভবিষ্যতের জন্য নতুন এক কূটনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলতে পারে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসহাক দারের এ সফর শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে বহুদিনের অচলাবস্থা ভেঙে একটি বাস্তবসম্মত ও কার্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা। এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের সফর দুই দেশের পারস্পরিক আস্থা পুনর্গঠনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
সব মিলিয়ে ইসহাক দারের এ সফরকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য একটি বড় মোড় ঘোরানোর সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখন কেবল সময় বলে দেবে, আলোচনায় হওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে কতদূর অগ্রগতি হয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ