
ছবি: সংগৃহীত
হিমালয় অঞ্চলে কয়েক দিন ধরে চলমান তীব্র গোলাগুলির পরে ঘোষিত যুদ্ধবিরতির মধ্যেই আজ সোমবার ভারতের ও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর প্রধানরা পরবর্তী কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়ে সরাসরি আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন। এই ফোনালাপটি হবে ভারতীয় সময় দুপুর ১২টায় এবং গ্রিনিচ মান সময় ৬:৩০টায়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এই উচ্চপর্যায়ের সামরিক যোগাযোগ মূলত যুদ্ধবিরতির স্থিতিশীলতা, উভয় দেশের সীমান্তে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য উত্তেজনা হ্রাসের রূপরেখা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কয়েক দিনের সংঘর্ষের পর আসে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা
গত সপ্তাহজুড়ে হিমালয় অঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তচৌকিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র গোলাগুলি ও মর্টার হামলা চলে, যার ফলে দু’দেশের সামরিক এবং বেসামরিক উভয় পক্ষেরই হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ তৈরি হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ করে।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে উভয় দেশ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়, যা তখনই কার্যকর হয়। মার্কিন প্রশাসন ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরাসরি ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির সঙ্গে কাজ করে, যার ফলে সীমান্তে একপ্রকার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা গেছে।
শান্তিপূর্ণ রাত, কিছু স্কুল এখনো বন্ধ
ভারতের সামরিক বাহিনী রোববার জানিয়েছে, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম রাতটি ছিল পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ। কোনো গোলাগুলি, মর্টার হামলা বা বিস্ফোরণের খবর মেলেনি, যদিও কয়েকটি সীমান্তবর্তী এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো সতর্কতামূলকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির কারণে সীমান্তে স্বস্তি ফিরে এসেছে, এবং সেই প্রভাব অর্থনীতিতেও পড়েছে। দুই দেশের শেয়ারবাজারে দেখা গেছে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার ইঙ্গিত দেয়।
আগের লঙ্ঘনের বিষয়ে হটলাইন বার্তা, সতর্কবার্তা ভারতের
যদিও শনিবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর মূলত শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করেছে, তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে প্রাথমিকভাবে কিছু সংঘর্ষবিরতির লঙ্ঘন ঘটেছিল। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারতীয় পক্ষ থেকে রোববার একটি ‘হটলাইন’ বার্তা পাকিস্তানকে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, আগের দিনের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের বিষয়টি নজরে রাখা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে যথাযথ প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
ভারতীয় বাহিনীর এই বার্তায় একটি সুস্পষ্ট বার্তা ছিল—যে, যুদ্ধবিরতি মানা না হলে তা চুপচাপ মেনে নেওয়া হবে না।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
এই প্রসঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করিনি। বরং আমরা প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে থেকেছি।” তিনি ভারতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পাকিস্তান সর্বদা শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখার পক্ষেই রয়েছে।
আজকের আলোচনা: উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ মোড়
আজ সোমবার দুপুরে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর প্রধানদের মধ্যে যে ফোনালাপ হতে যাচ্ছে, সেটিকে বিশ্লেষকরা ‘অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’ ও ‘চলমান উত্তেজনা প্রশমনের চাবিকাঠি’ হিসেবে দেখছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন কেবল ঘোষণায় শেষ নয়—মাঠপর্যায়ে প্রতিনিয়ত সমন্বয় ও বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করাও জরুরি। দুই দেশের সামরিক নেতৃত্ব যদি আজ সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে, তাহলে তা কেবল সীমান্ত নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিবেশকেই ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যতের করণীয়
এই পরিস্থিতি ঘিরে আন্তর্জাতিক মহল—বিশেষ করে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া সতর্ক নজরদারি করছে। যুদ্ধবিরতি বজায় থাকলে ভবিষ্যতে একটি দীর্ঘমেয়াদি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, যেখানে কাশ্মীর অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনাও খোলা থাকবে।
উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত রাষ্ট্র হওয়ায় সীমান্তে এই ধরনের সংঘর্ষ শুধু দ্বিপাক্ষিক নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আজকের সামরিক আলোচনা শুধুমাত্র একটি ফোনালাপ নয়—এটি দুই দেশের রাজনৈতিক, সামরিক এবং কূটনৈতিক অবস্থানের নতুন অধ্যায় শুরু করার সুযোগও বটে। যদি দুইপক্ষ আন্তরিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যায়, তাহলে সেটি দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি শান্তির ভিত্তি রচনায় গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ